কীটনাশক মুক্ত স্থানীয় জাতের শাক সবজি টিকিয়ে রাখতে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় এই প্রথমবারে মত চালু হয়েছে কমিউনিটি পর্যায় বীজ ভান্ডার। এর মাধ্যমে শুধু সবজী উৎপাদিত হবে এমনটাই নয়। এখানে সংরক্ষন করা হচ্ছে দেশী প্রজাতির শাক সবাজি, ঔষধি ও ফলজ বীজ।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থ্যা ওয়ার্ল্ড কনসার্ন বাংলাদেশ পরিবর্তন নামক একটি প্রকল্পের উদ্যোগে উপজেলার চারটি ইউনিয়নে এ বীজ ভান্ডার স্থাপন করা হয়েছে। আর এসব দেখভাল করছেন গ্রামীন নারীরা। বীজ ভান্ডার গুলোতে ছোট ছোট মাটির হাড়ি ও কাঁচের বয়াম।
আরও পড়ুন: আগাম জাতের অটোশিমের ভাল দামে খুশি চাষি
এতে স্থানীয় জাতের বীজ সংরক্ষণ করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। অন্তত ৪০ টি জাতের বীজের ধরন অনুযায়ী পাত্র রয়েছে। ছোট বীজের জন্য ছোট পাত্র, বড় বীজের জন্য বড় পাত্র। বীজ ভান্ডার থেকে বিনা মূল্যে বীজ সংগ্রহ করে বাড়ির উঠান কিংবা ক্ষেতে বপন করছে নারীরা। স্থানীয় জাতের সবজি উৎপাদনে সফল হয়েছেন তারা। একই সাথে পরিবারের পুষ্টির চাহিদা পূরণের পাশপাশি বাজারে বিক্রি করে বেশ লাভবান হচ্ছেন। এসব বীজ ভান্ডার এখন গ্রামীন নারীদের আত্মর্নিভরশীল হওয়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছে।
বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, কারও বাড়ির উঠানের মাচায় লাউ ঝুলছে। আবার কোন কোন মাচায় ঝুলছে ধুন্দল, ঝিঙ্গা, শসা, বরবটি, করলা। এছাড়া কারও উঠনে ঢেঁরশ, পাট, ডাটা, পুইসহ বিভিন্ন জাতের শাঁক সবজি শোভা পাচ্ছে। তবে এসব শাক সবজির বীজ ওই বীজ ভান্ডার থেকে সংগহ করেই ক্ষেতে বপন করেছেন গ্রামীন নারীরা। তাদের মতে ক্ষেতে ফলনও ভাল হয়েছে। এখন সেই ফলন বাজারে বিক্রি করে অনেকেই সাবলম্বী হচ্ছেন। এদিকে হাইব্রিডের কারণে দেশীয় শাকসবজি, ফলমূল, শস্য হারিয়ে যেতে বসেছে। সে ক্ষেত্রে ওই নারীদের এমন উদ্যোগ প্রশংসনীয়। এতে দেশি জাতের শাক সবজি টিকে থাকবে বলে অনেকই মনে করেছে।
আরও পড়ুন: ‘বিচার বিভাগে আস্থা হারালে খারাপ দিনের জন্য অপেক্ষা করতে হয়’
কৃষাণী কাকলী বাড়ৈ বলেন, এখন হাট-বাজার থেকে বীজ কিনতে হয়না। গ্রামের বীজ ভান্ডার থেকে বীজ সংগ্রহ করে শাক সবজি চাষ করছি। তা থেকে আবার বীজ সংরক্ষণ করে বীজ ভান্ডারেই রাখব। যাতে পরবর্তী বছর লাগাতে পারি।
বীজ সংরক্ষণের পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাইলে নীলগঞ্জ ইউনিয়নের সদরপুর গ্রামের জুলিয়েট বাড়ই বলেন, দেশীয় জাতের ফল, সবজি ও শস্যের পুষ্ট বা সবল দানা থেকে বীজ সংগ্রহ করা হয়। এরপর সেটি ধুয়ে পরিষ্কার করে রোদে শুকানোর পর মাটির এবং কাঁচের পাত্রে সংরক্ষণ করা হয়। তবে প্রতি একমাস পরপর বীজগুলো রোদে শুকিয়ে আবার ওই পাত্রে রাখতে হয়। এতে বীজের আর্দ্রতা ভালো থাকে।
আরও পড়ুন: পুলিশ হত্যা: রিজভী-সোহেলের বিচার শুরু
একই এলাকার অপর এক উপকারভোগী সবিতা রানী জানান, বীজ ভান্ডার থেকে বীজ নিয়ে নিজের বাড়ির উঠানে লাউ চাষ করেছেন। এত ফলনও বেশ ভালই হয়েছে। নিজেদের চহিদার পাশাপাশি বাজারে বিক্রি করতে পারবেন। একই কথা বলেছে ওই গ্রামের উপকারভোগী আরও নারীরা।
কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশীয় জাতের বীজ থেকে হওয়া গাছে পোকা কম হয়। এ কারণে তাতে সার ও কীটনাশক দেওয়ার প্রয়োজন হয় না তেমন। ফলে ওই পরিবারগুলোর নিরাপদ সবজির চাহিদাও মিটছে। তবে দেশীয় জাতের সবজি বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করছেন এসব গ্রামীন নারীরা।
আরও পড়ুন: ছয় ঘণ্টায় ঢাকা থেকে জাপান
ওয়ার্ল্ড কনসার্ন বাংলাদেশ’র উপজেলা প্রোগ্রামার অফিসার মাইকেল মধু জানান, দূযোর্গ ঝুঁকি হ্রাস,নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ,জীবন জীবিকার লক্ষ্যে গত ৫ ফেব্রæয়ারি এ উপজেলার বালিয়াাতলীর তুলাতলী, নীলগঞ্জর সদরপুর, মহিপুরের মনোহরপুর এবং লতাচাপলী ইউনিয়নের আমখোলাপাড়ায় এ বীজ ভান্ডার স্থাপন করা হয়। ওইসব গ্রামের হত দরিদ্র নারীদের নিয়ে গঠিত কৃষক মাঠ স্কুল এবং আত্মসহায়ক দলগুলোর সদস্যরা এই বীজ ভান্ডার থেকে বিনা পয়সায় বীজ সংগ্রহ করে আবার উৎপাদিত সবজির বা ফসলের সর্বোত্তম বীজ এই বীজ ভান্ডারে জমা করেন। এছাড়া একই গ্রুপের সদস্যরা অন্য সদস্যদের পরামর্শ নিয়ে বিলুপ্ত জাতের সবজি বা ফসল উৎপাদন করছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এ আর এম সাইফুল্লাহ বাংলা টাইমসকে বলেন, এক সময় দক্ষিনাঞ্চলে ঐতিহ্য ছিল দেশী প্রজাতির শাকসবজির বীজ কৃষক পর্যায়, বিশেষ করে গ্রামীন নারী কিশানীরা সংরক্ষণ করে রাখতেন। কিন্তু হাইব্রিডের করনে দেশী প্রজাতির শাকসবজি হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। সেক্ষেত্রে দেশী বীজ সংরক্ষনে জন্য বীজ ভান্ডা,এটি ভালো উদ্যোগ। এখানের সংরক্ষিত বীজ নিজেরাই ব্যাবহার করছে, তেমনি অন্যনের সাথে বিনিময় করছেন। তবে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তাদেরকে পরামর্শও দিয়েছি।
Leave a Reply