1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : Editor :
আমি কাঁদি, বিরহ মোছে না: বাবা... - বাংলা টাইমস
বৃহস্পতিবার, ০১ জুন ২০২৩, ০২:১৮ অপরাহ্ন

আমি কাঁদি, বিরহ মোছে না: বাবা…

সুপন রায়
  • প্রকাশের সময় : সোমবার, ১৫ মে, ২০২৩
  • ৩৭৮ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
প্রয়াত শিক্ষক রাজেশ্বর বাবু

আমি কাঁদি। কেঁদে বিরহ মুছতে চাই, মোছে না। কারণ, বাবার মতো করে কাউকেই ভালোবাসতে পারি না। তার কথা মনে পড়লে চেতনার বশীভূত আমাকে খোকা বানিয়ে দেয়। আর খোকারা কোনো দিনই সবকিছু খুলে বলার ক্ষমতা রাখে না।

 

আজ ১০ বছর হয়ে গেছে বাবা নেই। কিন্তু একটি দিনের জন্যও তাকে ভুলতে পারি না। প্রায় রাতেই তার কথা ভেবে নিরবে কাঁদি’। বাবা, আপনি কেমন আছেন আমাদের ছেড়ে? না ফেরার দেশে চলে গেলে। আপনাকে নিয়ে এতো সহসা এমন স্মৃতি কাব্য লিখবো কখনো ভাবিনি। সন্তান হিসাবে আমার প্রতি যে আপনার কত ভালোবাসা ছিলো তা কি করে বোঝাই। আমার কাছে তো তার কোন উপমা নেই বাবা। জীবনের প্রতিটি ক্ষণ, প্রতিটি মুহুর্ত ভাবি বাবা আপনি কেমন করে আমকে ছাড়া না ফেরার দেশে আছেন।

আপনাকে নিয়ে লিখতে বসতে চেয়েছি অনেক বার, আমার লেখার হাত তো বাবা সচল হয় না। আমার লেখার প্রতিটি ক্ষণে আপনার উপস্থিতি ছিলো বাবা অনুপ্রেরণার এক মহান আদর্শ। আপনার অনুপস্থিতি আমার ভাবনা চিন্তাকে এলোমেলো করে দেয়। আপনার ভালোবাসার কথা লিখে শেষ করা যায় না, যাবে না।

বাবা পুরনো দিনগুলোতে যখন আমি ফিরে যাই-নীরবে অশ্রু ঝরে। কোন অহমিকা চাওয়া পাওয়া ছিলো না আপনার, খুব সাধারণ জীবন যাপন করতেন। খাওয়া-দাওয়া পোষাক আশাকের প্রতি আপনার কোন লোভ ছিল না। অতি সহজ সরল জীবন যাপন ছিল আপনার, কোন আভিজাত্য ছিল না। সাদা পায়জামা আর সাদা পাঞ্জাবী পরেই আপনার জীবন কেটে গেলো। শিক্ষক হিসাবে যে জীবন শুরু করেছিলে শিক্ষক হিসাবেই জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটালে। নিজে ঘর সংসার করতে করতেও পড়ালেখা করেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেছেন।

একজন আদর্শ শিক্ষকের কখনও মৃত্যু হয় না। তিনি তার সততা, দক্ষতা, যোগ্যতা, দেশপ্রেম, ত্যাগের মহিমা ও নৈতিকতার মাধ্যমে ছাত্রদের মনোজগতে অমরত্বের বীজ বপন করে যান।

মানুষের মৃত্যু হয়, কিন্তু শিক্ষকেরও কি মৃত্যু হয়? আমার মনে হয় না। ব্যক্তির মৃত্যু হতে পারে, কিন্তু শিক্ষক বেঁচে থাকে তার অগনীত ছাত্র-ছাত্রীদের মনের মাঝে, কর্মের মাঝে, কৃতিত্বের মাঝে, সফলতার মাঝে। শিক্ষক মানে মূলত জীবনের পথ প্রদর্শক, অন্ধকার পথের আলোকবর্তিকা। ঠিক সে অর্থেই স্যার ছিলেন অন্ধকারের আলোকবর্তিকাই। বলছি প্রয়াত রাজেশ্বর বাবুর কথা। যিনি সবার প্রিয় বিএসসি স্যার ছিলেন।

কিছু মৃত্যু অগনীত ছাত্র-ছাত্রীদের বাকরুদ্ধ করে দিতে পারে সহজেই। ১৬ মে রাজেশ্বর বাবুর ১০ম মৃত্যুবার্ষিকী। কষ্ট হচ্ছে খুব, কারণ অনেকের মত আমিও তার ছাত্র ছিলাম।

তিনি সমকালীন বিরল একজন আদর্শবান শিক্ষক হিসেবে ছাত্রদের শুধু স্বপ্নই নয়, স্বপ্ন পূরণের পথ বদলে দিতেন এবং সঠিক রাস্তা দেখাতেন। আমাদের দেশের প্রায় প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আজ সততা নির্বাসিত, শিষ্টাচার দুর্লভ, বেশীর ভাগ শিক্ষার্থীরা আজ পথভ্রষ্ট ও বিভ্রান্ত। সমাজ ও রাষ্ট্রে নৈতিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর অগ্নি-মশাল নিয়ে ব্রতী যে শিক্ষক তিনিই পারেন আলোর পথ দেখাতে। আর সেই আলোর ফেরিওয়ালা প্রয়াত রাজেশ্বর বাবু (বিএসসি স্যার) স্যারের কর্ম ও শিক্ষাজীবন ছিল সাফল্যে পরিপূর্ণ। গণতন্ত্র, সুশাসন, কথা বলার স্বাধীনতা, মানবাধিকার এবং সমাজকর্ম শিক্ষার প্রসারে তিনি অনবদ্য ভূমিকা রেখে গেছেন।

রাজেশ্বর বাবু বরগুনা জেলার বামনা উপজেলার সারওয়ারজান পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলেন। দীর্ঘ ২৮ বছর এই স্কুলেই তিনি শিক্ষাদান করেছেন। তার গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠি জেলার সদর উপজেলার বাদলকাঠি গ্রামে।

শিক্ষার মান উন্নয়ন, শৃঙ্খল শিক্ষালয়ের রূপকার হিসেবে তার অবদান অনস্বীকার্য। রাজেশ্বর স্যারের প্রাপ্য সম্মানটুকু যথাযথভাবে দিতে পেরেছি বলে মনে হয়না। আজ আমাদের মাঝে স্যার নেই। আছে, তার স্মৃতি, তার শাসন, তার শিক্ষা।

প্রত্যেক জীবনকেই মৃত্যুকেবরন করতে হবে এবং মুত্যু চিরন্তন। তবে কিছু মৃত্যুর মৃত্যু হয় না, শুধু দেহটাই হয়তো আড়াল হয়। রাজেশ্বর স্যারের মৃত্যুটাও শুধু দেহ থেকে প্রাণ ত্যাগ করেছে। কিন্তু তার কর্ম, তার শিক্ষা, তার আদর্শ দেশে-বিদেশে, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন পদে, বিভিন্ন যায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা তার ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে স্মৃতি হয়ে থাকে-থাকবে। স্যার এমনই এক জন। যাঁকে ভালবাসায়, স্মৃতিতে, স্মরণে, আদর্শে ধারন করেই পথ চলছি, চলবো তার গর্বিত ছাত্র হয়ে। আপনি ভাল থাকুন ওপারে। বিনম্র শ্রদ্ধা…

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায় সিসা হোস্ট