1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : Editor :
'জাহাজ ধবংস করে ৩০ জনের মধ্যে নয়জন ফিরে আসি' - বাংলা টাইমস
রবিবার, ০২ এপ্রিল ২০২৩, ০২:৪৬ অপরাহ্ন

‘জাহাজ ধবংস করে ৩০ জনের মধ্যে নয়জন ফিরে আসি’

এম,এ জলিল, আখাউড়া (ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া)
  • প্রকাশের সময় : শনিবার, ১১ মার্চ, ২০২৩
  • ৫১ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে

৭১ রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা নৌ-কমান্ডো মো: ফজলুল হক ভূইয়ার সাথে একান্ত আলাপচারিতায় মুক্তিযুদ্ধের সময়কার নানাহ স্মৃতি নিয়ে বাংলা টাইমসকে জানান, নৌ বাহিনীতে চাকুরীরত অবস্থায় দেশের কথা চিন্তা করে ও পরিবার কে সময় দিতে এক মাসের জন্য ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসি। ৩ মার্চ হইতে ছুটিতে থাকা ফজলূল হক ভ‚ইয়া ব্রাক্ষণবাড়িয়া সদর উপজেলার কোড্ডা গ্রামের বাড়ীতে সময় কাটাঁতে থাকেন। ২৫ মার্চ রাতে পাক-হানাদার বাহিনীর আর্তকিত হামলার খবর শুনে আর বসে থাকতে পারেনি।

 

২৬ মার্চ দলবল নিয়ে আখাউড়ার ইপিআর ক্যাম্পে হানা দিয়ে দখলমুক্ত করেন। অংশ নিয়েছেন এরকাধিক সম্মুখ যুদ্ধে। প্রশিক্ষণ নিয়ে নাম লেখান “সুইস মাডাল স্কোয়ার্ড“। মাইন ফাটিয়ে পাকহানাদার বাহিনীর সাতটি জাহাজ ধবংসের অগ্রণী ভূমিকায় ছিলেন তিনি।

ঊীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হক ভ‚ইয়া যুদ্ধের বর্ণনা দিতে প্রথমেই বলেন,ইপিআর ক্যাম্পের কথা ২৬ মার্চ কোড্ডার বাড়ী থেকে আখাউড়া এসে আখাউড়া জিআরপি ক্যাম্পের হাবিলদার সহ অন্যন্য সদস্য এবং এলাকার লোকজনকে নিয়ে আমরা ৫০/৬০ জন মিলে ইপিআর ক্যাম্পে এট্যাক করি। ইউুপিআর ক্যাম্পে পাকিস্তানী ৩০ জন সৈন্য ছিলো। সারাদিন ধরে আমাদের সঙ্গে তাদের যুদ্ধ হয়। গভীর রাত্রে তাদের পক্ষ থেকে কোন ধরনের হামলা এ্যাটাক হচ্ছে না দেখে আমি ক্যাম্পের কাছে যাই। ক্যাম্পের ভিতরে কেউ নেই দেখে চিৎকার দিয়ে জানিয়ে দিতেই আমাদের লোকজন এসে তা দখলে নেয়। তখন রাত্র প্রায় ৩ টা। ওই যুদ্ধে শ্যামনগর গ্রামের জিতু দাসের স্ত্রী মারা যায়।

তিনি বলেন এপ্রিল মাসের ৭/৮ তারিখে বর্তমানে প্রয়াত আখাউড়ার এ,এম মো: ইসহাক(বীর প্রতীক) আমাকে ডেকে পাঠা,তিনি আমাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ক্যাপ্টন আইনুদ্দিন স্যারের কাছে যেতে বলেন। নৌ-বাহিনীতে চাকুরি করতাম জেনে তিনি আমাকে ৩০ জনের একটি প্লাটুনের কমান্ডার বানিয়ে দেওয়া হয়। হবিগঞ্জের চুনারুঘাট হয়ে আমরা ভারতের ত্রিপুরার সিমনা ক্যাম্পে উঠি। মেজর মো: শফিউল্লাহ সেখানে সেক্টর কমান্ডার এর দায়িত্বে ছিলেন। তার অধীনেই আমরা সেখানে ট্রেনিং নেই। ট্রেনিং চলাকালে আমাদের কয়েকজনকে বাচাই করে আবার হবিগঞ্জের সাতছড়ি এলাকায় পাঠিয়ে দেয়া হয়। এপ্রিলের শেষের দিকে সেখানে ভয়াবহ যুদ্ধ শুরু হয়। টানা ১৬ দিন আমরা যুদ্ধ করি। আমরা ছিলাম চার প্লাটুন সদস্য। আমাদের অস্ত্র ছিলো রাইফেল,এলএমজি,কিন্ত কম লোকবল আর সাধারণ অস্ত্র দিয়ে পাক বাহিনীর সাথে আমরা পেরে উঠতে পাািরনি। পাক বাহিনী আমাদের উপর সেল মারলে অনেকেই শহীদ হন। বাধ্য হয়ে আমরা সেখান থেকে সরে যায়। এক পর্যায়ে আমরা সেখান থেকে আবার আমরা ভারতে চলে যাই।

ওই যুদ্ধের সময়কার স্মৃতি বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন,আমরা থেমে থেমে যুদ্ধ হতো,খেয়ে না খেয়ে যুদ্ধ করেছি। ভারত থেকে যে খাবার আসতো আমরা সময় পেলে তা খাইতাম। তবে খাওয়ার কথা আমাদের মাথায় আসতো না। আমরা শুধু ভাবতাম দেশ স্বাধীনের জন্য যুদ্ধ করছি। দেশকে মুক্ত করতে হবে। আমরা সাতছড়ি থেকে ভারতে ফিরে গেলে ট্রেনিং ক্যাম্পে মেজর শফিউল্লাহ জানতে চায় নৌ বাহিনীর লোক কে কে আছে। তখন আরজ আলী,আবদুল খালেক আমি হাত উঠাই। আমাদের কে ডেকে নিয়ে বিএসএফ ক্যাম্পে পাঠানো হয়। সেখান থেকে প্রায় মাস তিনেক ট্রেনিং দেয়া হয়। ট্রেনিং দিতেন ভারতের জিএস মাটিস। ট্রেনিং এ আমি সহ অনেকের নাম লেখানো হয় সুইসাডাল স্কোয়ার্ডে। নৌবন্দর ধবংস করে দিতে খুলনা চট্রগ্রাম,চাঁদপুর,নারায়নগঞ্জের জন্য চারটি টিম তৈরি করা হয়। আমাকে রাখা হয় ৩০ সদস্যের নারায়নগঞ্জের টিমে,আবদুর রহমান ছিলেন ঐ টিমের কমান্ডার আর আবদুস সোবাহান নামের একজন ছিলেন আমাদের কে গাইড হিসেবে দেওয়া হয়। আগষ্টের ১ তারিখ আমরা নারায়নগঞ্জের মাসুম ঠিকাদারের বাড়ীতে অবস্থান করে আমরা ৩/৪ দিন রোিক করি। কোথায় কোথায় জাহাজ আছে আমরা তা নিশ্চিত হই।

ঊীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলূল হক বলেন,১৪ আগষ্ট রাতে আমাদের কে চারটা পোর্ট দখলের নির্দেশ দেওয়া হয়। ওয়াকিটকিতে যখন “আমার পুতুল আজ যাবে শ্বশুর বাড়ি,,গানটা বেজে উঠবে তখনই হামলা করতে হবে বলে নির্দেশ দেয়া হয়। অভিযানে আমিসহ অন্যরা শরীরে গামছা দিয়ে লিমপেট মাইন বেধে নেই। লিমপেট মাইন হলো,যে জিনিসটার ক্যাপ খুলে দেয়ার ১৫-২০ মিনিটের মধ্যে বিস্ফোরিত হবে। এছাড়া আমাদের সঙ্গে ছিলো কাপনের কাপড় কেননা,সহকর্মী কেউ শহীদ হলে যেন তাঁকে দাফন করা যায়। মাইন নিয়ে সাঁতরিয়ে আমরা জাহাজের কাছে রেখে আসতাম। তিনি বলেন এই অভিযানের নাম ছিলো “অপারেশন জ্যাকপট” আমরা সাতটি জাহাজ উডিয়ে দিতে সক্ষম হয়ে ছিলাম। এ অভিযানে যাওয়া ৩০ জনের মধ্যে মাত্র নয়জন ফিরে আসতে পেরেছি। সময় মতো ফিরে না আসতে পারায় পাকবাহিনীর হামলায় তারা শহীদ হন। পরে আমরা ৫ জন জামালপুর ফেরিগাটে গিয়ে একই কায়দায় হামলা করি সেখানেও আমাদের ২ জন শহীদ হন। অভিযান শেষে আমরা ভারতে চলে যাই। সেখানে গিয়ে বিজনা ক্যাম্পে থাকি। এরই ফাকে হোসেনপুর এলাকায় এসে একটি ব্রিজ ধবংস করি। এক সময় খবর পাই দেশ স্বাধীন হয়েছে।

তিনি বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সবাই নিজেদের কাছে থাকা অস্ত্র জমা দিতে শুরু করি,কিন্তু আমার কাছে থাকা লিমপেট মাইন নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়,কেউ এটি জমা রাখতে চাই ছিলেন না। অনেকের পরামর্শে মাইন নিয়ে আমি কুমিল্লা চলে যাই। সেখানে গিয়ে জেড ফোর্সের অধিনায়ক মেজর জিয়াউর রহমানের কাছে মাইনটি জমা দিতে চাই। মেজর জিয়াউর রহমান আমার কাছে জানতে চান এটি কি । আমি লিমপেট মাইন বললে তিনি জানান এটা চিনেন না। পরে আমাকে দিয়েই এক জায়গায় এটি রেখে দেয়া হয়। এভাবেই নানাহ বিভিষিকার মধ্য দিয়ে আমরা স্বাধীন পতাকা, মানচিত্র ,স্বাধীন দেশ পাই।

মৃত একিন আলীর ছেলে বীর মুুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হক ২ ছেলে ২ মেয়ের জনক। বর্তমানে তিনি সরকারের উপহার দেওয়া বীরনিবাশে পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করেন।

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায় সিসা হোস্ট