দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে বহুল আলোচিত সহিদুল (৬০) হত্যার ২০ দিনের মাথায় রহস্য উদঘাটন করেছে ফুলবাড়ী থানা পুলিশ। জুয়া খেলায় সহিদুল জিতে যান, সেই খেলায় হেরে যাওয়ার সাথিরাই টাকার জন্য সহিদুলকে হত্যা করে। হত্যায় জড়িত ৩ জুয়াড়িসহ ৪ জনকে আটক করেছে পুলিশ।স্বজনদের সন্দেহকারী ব্যক্তি সম্পৃক্ত নন।
পুলিশ জানায়,হত্যার পর তারা সবাই পালিয়ে যায়। ঈদ করতে বাড়িতে এলে রাতে আটক করা হয়। আটককৃতরা হলেন -উপজেলার শিবনগর ইউপির দাদপুর মালিপাড়া গ্রামের কালাচাঁদ -এর ছেলে আমিনুল ইসলাম টেম্পু(২৪); পশ্চিম গৌরীপাড়া (জোলাপাড়া) গ্রামের আব্দুস সামাদের ছেলে জীবন (১৯); একই গ্রামের সরোয়ার্দির ছেলে আশিক (১৮) ও দাদপুর মালিপাড়া গ্রামের আলিম উদ্দিনের ছেলে সোহেল (২১)।
মৃতের ভাই রহেদুল ইসলাম বাদী হয়ে ফুলবাড়ী থানায় অজ্ঞাত অপরাধীদের বিরুদ্ধে এজহার দাখিল করলে সূত্রে বর্ণিত মামলাটি রুজু করে তদন্তভার এসআই (নিঃ) মো. রওশন সরকারকে তদন্তভার অর্পণ করা হয়। দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ী থানার মামলা নং- ১১ তারিখ- ১৮/০৪/২০২২খ্রিঃ। ধারা- ৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড।
হত্যার পূর্বের ঘটনা: মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ফুলবাড়ী থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক রওশন সরকার বলেন ,আটক তিন জুয়াড়ীর মধ্যে একজন হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার কথা আদালতে স্বীকার করেছে। তার দেয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী অন্য জুয়াড়ীদের আটক করা হয়।তিনি জানান, ভিকটিম মো. সহিদুল ইসলাম ১৭ এপ্রিল নিজ ঘর হতে ৫ হাজার টাকা নিয়ে ২০১৫ সাল হতে চলমান উচ্ছেদ মামলার বিবাদী হিসেবে সাক্ষ্য প্রদানের জন্য বিজ্ঞ আদালত দিনাজপুর যায়। ভিকটিম আদালতের কার্যক্রম শেষে একই দিন নিজ এলাকায় ফুলবাড়ী ফিরে আসলেও নিজ বাড়িতে ফিরে যান নি। পরের দিন অর্থাৎ ১৮ এপ্রিল প্রত্যুষে মামলার ঘটনাস্থল ফুলবাড়ী থানাধীন ৭নং শিবনগর ইউনিয়নের নুরপুর গ্রামস্থ জনৈক আফতার আলীর হাসকিং মিলের পূর্ব দক্ষিন কোনে পরিত্যক্ত মিল ঘরের বারান্দায় ভিকটিমের লাশ ফাঁস দেয়া ঝুলানো মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। ভিকটিমের গলায় কাটা রক্তাক্ত জখম ছিল এবং ভিকটিমের এক পা ঘটনাস্থল এর মেঝেতে ছিল। ঘটনাস্থলে অপরাধীদের ফেলে যাওয়া রক্তাক্ত ০১(এক)টি ছুরিও পাওয়া যায়। হত্যার বিষয়টি পরিবারের লোকেরা ওই সময় জমি সংক্রান্ত বিরেধের কারণে স্থানীয় হামিদুল ইসলামের পরিকল্পনায় হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছিলেন।
যেভাবে হত্যাকান্ড: মামলা তদন্তকালে প্রযুক্তিগত পরীক্ষা নিরীক্ষা করে প্রথমে সন্দেহভাজন অপরাধী ফুলবাড়ীর দাউদপুর মালিপাড়া গ্রামের কালাচাদের ছেলে মো. আমিনুল ইসলাম প্রকাশ টেম্পু (২০)কে ধৃত পূর্বক ০৩ দিনের পুলিশ রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গত ২ মে ধৃত অপরাধী বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তীমূলক জবানবন্দি প্রদান করে জানান যে, গত ১৭ এপ্রিল রাত অনুমান সাড়ে ৮টায় জীবন ও আসিফ প্রকাশ মেছি নামে ০২ জন প্রথমে আমিনুল ইসলাম টেম্পুকে জুয়া খেলার আহŸান জানান। ঘটনাস্থল (লাশ প্রাপ্তির স্থানের পিছনে ইউকিলিপটাচ গাছের বাগানে) রাত অনুমান ১২টার দিকে আমিনুল ইসলাম টেম্পু জুয়া খেলতে গিয়ে দেখেন যে, জীবন, মেছি, রানা ও সহিদুল(মৃত ব্যক্তি) জুয়া খেলছে। সেও তাদের সাথে জুয়া খেলায় যোগ দেয়। এক পর্যায়ে আমিনুল ইসলাম টেম্পুর নিকট থাকা সব টাকা হেরে যায়। জুয়া খেলার অধিকাংশ টাকাই সহিদুল (মৃত) জিতে নেয়। পরে সহিদুল (মৃত ব্যাক্তি) টয়লেটে যাওয়ার কথা বলে জুয়াতে জেতা সকল টাকা নিজের পকেটে নিয়ে টয়লেটের দিকে রওয়ানা হলে প্রথমে জীবন,মেছি ও রানা ক্ষিপ্ত হয়ে সহিদুলের পিছু নেয়। সহিদুল (মৃত ব্যক্তি) লাশ প্রাপ্তির স্থানের পাশের টয়লেট হতে বের হওয়া মাত্রই জীবন,মেছি,রানা ও আমিনুল ইসলাম টেম্পু তার উপর হামলে পড়েন। একপর্যায়ে জীবন তার নিকট থাকা ছুরি দিয়ে সহিদুলের গলা কেটে দেয়। আমিনুল ইসলাম টেম্পু সহিদুলের পা চেপে ধরে, মেছি কোমর চেপে ধরে, রানা হাত চেপে ধরে। মৃত্যু নিশ্চিত করতে এবং ঘটনা আড়াল করতে ঘটনাস্থলের পাশে থাকা কাপড় শুকানোর দড়ি কেটে রানা পরিত্যক্ত মিল ঘরের বারান্দার পাড়ের সাথে ফাঁস সৃষ্টি করে সকলে সহিদুলকে ধরে ফাঁসে চড়িয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে সহিদুলের নিকট থাকা জুয়া খেলায় জেতার সব টাকা জীবন নিয়ে নেয়। ঘটনার পরে তারা ৪ জন পুনরায় জুয়া খেলার স্থানে যায় ও নিজেদের মোবাইল ফোনের সিম কার্ড নষ্ট করে নিজেদের ঘটনার দায় হতে আড়াল করার চেষ্টা করে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ফুলবাড়ী সার্কেল) মো. আসাদুজ্জমান বাংলা টাইমসকে বলেন, মামলার তদন্তকারী অফিসার এসআই (নিঃ) মো. রওশন সরকার মামলার তদন্তভার গ্রহণ করে যথানিয়মে মামলার পূর্ববর্তী কার্যক্রমকে সন্নিবেশিত করে মামলার তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেন। অফিসার ইনচার্জ ফুলবাড়ী থানা, পুলিশ পরিদর্শক(তদন্ত), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফুলবাড়ী সার্কেল, ডিবি দিনাজপুর, সহ জেলা পুলিশের উদ্ধতন অফিসারগণ আন্তরিক ভাবে মামলার বিষয়টি দেখার কারণে এতো অল্প সময়ের মধ্যে মামলার সফলতা এসেছে বলেও তিনি জানান।
Leave a Reply