ফুলবাড়ীয়ায় মশার উপদ্রব বেড়ে গেছে। বাসাবাড়ি, ধর্মীয় উপাসনালয়, কর্মস্থল, চলতি পথ কোথাও মশা থেকে নিস্তার মিলছে না। মশার উপদ্রব থেকে বাঁচতে দিনদুপুরে মশারি টানিয়ে ঘুমোতে হচ্ছে। মশা নিধনে কোন পদক্ষেপ নেই এখানে। মশার কয়েলের ব্যবহারেই যেন ভরসা। কয়েলের ধোঁয়া প্রতিটি মানুষের জন্যই ক্ষতিকারক। একটি কয়েল জ্বালিয়ে রাখার ধোয়া একশত সিগারেটের ধোঁয়ার সমান। যেই ধোঁয়া মানবদেহে শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত নানা সমস্যার সৃষ্টি করে।
সম্প্রতি মশার উপদ্রবে ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মশা তাড়াতে বেড়েছে কয়েলের ব্যবহার। জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি ও নীরব মরণ ব্যাধি সেই কয়েল জ্বালিয়েই রাত পারি দেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাঁদের স্বজনেরা।
জানাযায়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেটিতে শ্বাসকষ্ট,পাতলা পায়খানাসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসার জন্য এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ০৬জন শিশু ১৭ জন নারী ও ১৫জন পুরুষ ভর্তি রয়েছে। সরেজমিনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দেখা যায়, মহিলা ওয়ার্ডের প্রায় বেডে মহিলা ও শিশু রোগী পরিপূর্ণ। তন্মধ্যে অনেকেই ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত ফ্লোরে (মেজেতে) বিছানা করে বাঁচ্চাদের চিকিৎসা নিচ্ছেন এসময় বাচ্চার চিকিৎসা নিতে আসা এক মা কে দেখাযায় একহাতে কয়েল আরেক হাত দিয়ে বাচ্চা কুলে নিয়ে ঘুম পাড়াচ্ছেন। রোগীর অভিভাবকেরাও জানেন কয়েলের ধোঁয়া মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর তবুও কেন কয়েল জ্বালিয়ে রাত পারি দিচ্ছেন? এমন প্রশ্নে তারা জানান,হাসপাতালে মশার উপদ্রব অনেক বেশি। ফ্যান ছেড়ে ঘুমালে বাচ্চাদের ঠান্ডা লাগার সম্ভাবনা রয়েছে। আর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নিকটে মশারী চাইলে তারা মশারীও দেননা । তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই সারারাত কয়েল জ্বালিয়ে রাখি।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বাচ্চার চিকিৎসা নিতে আসা সাইফুল ইসলাম বলেন, হাসপাতাল থেইক্যা (থেকে) আমাদের কোন মশারী দেননা। সেজন্য দুটি কয়েল কিনে সারারাত বিছানার নিচে ধরিয়ে রাখি। জীবনের ঝুঁকি থাকা স্বত্বেও কয়েল ব্যাবহার করছি। কী আর করবো বাচ্চাকে নিয়ে তো ঘুমাতে হবে।
পাশের সিটেই পানিবাহিত অসুখ নিয়ে ভর্তি হওয়া রাইসা নামক আরেক শিশুর অভভাবক জানান, মশারী দিবে দূরের কথা নার্সদের মাঝে মধ্যে ডাকলেও তাঁরা রোগীর স্বজনদের সাথে ব্যাপক দুর্ব্যবহার করেন। অপরদিকে পুরুষ ওয়ার্ডেও দেখাযায় হুবহু চিত্র। ওয়ার্ড গুলোতে নার্সদের বসার জন্য নির্দিষ্ট কাউন্টার থাকলেও সেখানে কোন নার্সই বসেননা। রাত ১০টার মধ্যেই দরজা লাগিয়ে ঘুমিয়ে যান তাঁরা। ঔষধপত্রের জন্য রোগী ও তাঁর স্বজেনরা নার্সদের রুমে একাধিকবার ডাকার পর মেলে সেবা। অনেক ক্ষেত্রে কতিপয় নার্স কর্কশ খারাপ ব্যবহার করেন বলে একাধিক ব্যক্তি জানান। এসময় রেগী ও তাদের স্বজনেরা হাসপাতালে দ্রুত মশারী ব্যবস্থাকরণ ও নার্সদের কাউন্টারে বসে শতভাগ রোগীর তদারকী করে সেবা প্রদানের জোর দাবী জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নার্স ইনচার্জ বেদেনা আক্তার এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমাদের মশারী টানানোর ব্যবস্থা আছে, ষ্টোরে পর্যাপ্ত পরিমানে মশারী আছে। সিস্টার ওয়ার্ড বয়দের কাছে রোগীরা মশারী চাইলে না দিলে তাঁরা আমাকে বলতে পারতো। কেউ মশারী না টানালে আমরা কী করবো? আর কাউন্টারে রাতের বেলায় নার্সরা না বসলেও দিনের বেলায় ঠিকই বসেন। যার প্রেক্ষিতে সরেজমিনে দিনের বেলায় খোঁজ নিলে দিনের বেলায়ও কোন নার্সকে ওয়ার্ডের নির্দিষ্ট কাউন্টারে বসে থাকতে দেখাযায়নি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বিধান চন্দ্র দেবনাথ বাংলা টাইমসকে বলেন, আমাদের এখানে পর্যাপ্ত পরিমাণে মশারী আছে। নার্সরা মশারী না দিলে আমাকে ফোন দিবেন।
Leave a Reply