ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন হওয়ার দীর্ঘ সাড়ে তিন বছর পর রাজপথের আন্দোলন সংগ্রামে অচেনা নেতৃত্বসহ পূর্ণাঙ্গ কমিটি পেল ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগ। সাত সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয় ২০১৮ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি।
প্রায় ৪৫ মাস পর যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে তার মোট সদস্য সংখ্যা ৩৪৯ জন। এরমধ্যে রোববার রাতে ২৯৫ জন ও সোমবার দুপুরে ৫৪ জনের নামের তালিকা প্রকাশ করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য তাদের ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি থেকে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল হোসেন রুবেল ও সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন শোভন।
এতদিন পর কমিটি হওয়ার পরেও যেন বিতর্ক থামছে না। ৩৪৯ সদস্য বিশিষ্ট এই কমিটি নিয়ে সংগঠনের সাবেক ও বর্তমান ছাত্রলীগ নেতাদের মাঝে বির্তকের ঝড় বইছে।
অভিযোগ উঠেছে, ভাইলীগ লবিং রক্ষার্তে বিগত সময়ে রাজপথে অচেনা, বিবাহিত, মাদক ব্যবসায়ী, অছাত্র, একাধিক মামলার আসামি, মতাদর্শে বিশ্বাসী পরিবারের কয়েকজনও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেই সাথে ছাত্রদল করে আসা দলে অনুপ্রবেশকারীকেও দেয়া হয়েছে নেতৃত্ব। ফলে দীর্ঘ শ্রম ঘামে রাজপথে সক্রিয়রা হয়েছেন বঞ্চিত।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ১০ এর ‘ক’ ধারায় বলা হয়, জেলা কমিটি ১৫১ সদস্যের নির্বাহী সাংসদ গঠিত হবে। সেখানে জেলা ছাত্রলীগের ৩৪৯ জনের কমিটিকে ঘিরে সমালোচনা চলছে। এছাড়া বয়স্ক, অছাত্র, প্রবাসী, ব্যবসায়ী, বিবাহিত, জুতার কারখানার কারিগর, মাদক সেবন মামলার আসামি, সন্তানের বাবা এমনকি ছাত্রদল কর্মীর নামে কমিটিতে পদবি দিয়ে রাখার অভিযোগ উঠেছে। অথচ ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের ৫ এর ক উপধারা অনুযায়ী অনুর্ধ্ব ২৯ বছর বয়সী বাংলাদেশের যেকোনো স্বীকৃত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ছাত্রলীগের প্রাথমিক সদস্য হতে পারবেন।
৫ এর গ উপধারায় ৫ এর ক উপধারা অনুযায়ী বিবাহিত, ব্যবসায়ী ও চাকুরিতে নিয়োজিত কোনো শিক্ষার্থী ছাত্রলীগের কোনো কর্মকর্তা হতে পারবেন না।
জানা যায়, পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে সহ-সভাপতি পদ দেওয়া আমির হামজা ভূইয়া নাহিদ ২০০৬ সালে এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। সেই অনুযায়ী তার বয়স ৩০ বছরে ঊর্ধ্বে। সহ-সভাপতি মোবারক হোসেন (জিসান) জেলা শহরে মোবাইল ব্যবসায়ী ও এক কন্যা সন্তানের বাবা ছাড়াও এই কমিটিতে অন্তত অর্ধশতাধিক বিবাহিতকে রাখা হয়েছে। শাফি আলম নামের এক সহ-সভাপতি ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে জড়িত অভিযোগ করে ইতোমধ্যে তার বিএনপির মিছিলে হাতে ব্যানার নেওয়া একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে।
এক সহ-সভাপতি ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক গত বছরের ১১ এপ্রিল সীমান্তবর্তী উপজেলা আখাউড়ায় মাদকসহ গ্রেফতার হন, সেই মামলার চার্জশিটেও তাদের নাম রয়েছে। এক দম্পতিকে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও উপ-সম্পাদক পদে রাখা হয়েছে। সহ-সম্পাদক পদে জুতার ফেক্টরির কারিগর শয়ন আহমেদ শিখনের নামও রয়েছে। সহ-সভাপতির পদে এক ঠিকাদারের নামও রয়েছে। পূর্ণাঙ্গ কমিটির পদে থাকা অধিকাংশেরই ছাত্রত্ব নেই বলে জানা গেছে।
৩৪৯ সদস্যের অনুমোদন দেওয়া পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও সহ-সভাপতি করা হয়েছে ৯০ জনকে, যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক ১১ জন, সাংগঠনিক সম্পাদক ১১ জন, অন্যান্য সম্পাদক ও উপ-সম্পাদক ১৩৬ জন, সহ-সম্পাদক ৫৯ জন ও সদস্য ৪০জনের নাম রয়েছে। কমিটিতে জেলা সদর ছাড়াও বিভিন্ন উপজেলার বেশ কয়েকজন নেতার নাম রয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগের সাবেক কমিটির এক সহ-সভাপতি বলেন, যাদের জেলা ছাত্রলীগের পদ দেয়া হয়েছে তাদের অনেকেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রাজপথ সম্পর্কে অবগত নয়, আমরা আগে কখনও দেখিনি। শুনেছি তারা ঢাকা, চট্রগ্রাম এ চাকুরী/ব্যবসা করে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছাত্রলীগের সাথে জড়িত এমন অনেক নেতা-কর্মীরাও পোষ্ট দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
এ ব্যাপারে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন শোভন এ বলেন, কেন্দ্র্রীয়ভাবে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। কমিটিতে থাকা কারো বিরুদ্ধে যদি কোনো অভিযোগ থাকে তাহলে বিষয়টি কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে অবহিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হবে।’
উলেখ্য, ২০১৮ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রবিউল হোসেন রুবেলকে সভাপতি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন শোভনকে সাধারণ সম্পাদক করে নতুন কমিটি ঘোষণা করে তৎকালীন সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন।
Leave a Reply