চট্টগ্রামে ঐতিহ্যবাহী পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) জশনে জুলুসে মানুষের ঢল নামে। নানা শ্রেণি পেশা ও বয়সের মানুষ এতে শরিক হয়। সবার মুখে হামদ, নাত, দরূদ আর শ্লোগান। বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্যদিয়ে চট্টগ্রামে ৫০তম ঐতিহাসিক জশনে জুলুস ঈদ এ মিলাদুন্নবী (সাঃ) উদযাপিত হচ্ছে। দেশের সবচেয়ে বড় এই জুলুসে অংশ নেন লাখো ধর্মপ্রাণ মুসলমান।
বুধবার (১৯ অক্টোবর) সকাল থেকে জামেয়া আহমদিয়া আলিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন আলমগীর খানকা থেকে জশনে জুলুসের শোভাযাত্রা শুরু হয়ে। পরে নগরীর প্রধান প্রধার সড়ক প্রদক্ষিন শেষে পুনরায় জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসা ময়দানে এসে জুলুসের মিছিল সমাপ্ত হয়।সেখানে মাহফিল চলছিলো। মাহফিলে দেশবরেণ্য আলেম-ওলামাগণ বক্তব্য রাখছেন। জুলুস ময়দানে যোহরের নামাজ আদায় করা হবে।
জশনে জুলুস ঈদ এ মিলাদুন্নবী (সাঃ) শোভাযাত্রার নেতৃত্ব দেন আওলাদে রাসূল আল্লামা পীর সৈয়্যদ মুহাম্মদ সাবির শাহ মাদ্দাজিতুল আলী।
মাহফিলে বক্তব্য রাখেন,আনজুমান-এ-রহমানিয়া আহমদিয়া সুনিয়া ট্রাস্ট’র সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ মহসিন, সেক্রেটারী জেনারেল মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, এডিশনাল জেনারেল সেক্রেটারী মুহাম্মদ সামশুদিন, পিএইচপি ফ্যামেলীর চেয়ারম্যান সুফি মুহাম্মদ মিজানুর রহমান, জামেয়া আহমদিয়া সুনিয়া কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ আল্লামা মুফতি হিযব রহমান প্রমুখ।
বক্তরা বলেন, ১২ই রবিউল আউয়াল পৃথিবীর বুকে আল্লাহর রহমত হিসেবে আবির্ভূত হন আমানের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম। তিনি সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য সর্বোত্তম আদর্শের শিক্ষানাতা হিসেবে আবির্ভূত হয়ে তাঁর সুন্দরতম আদর্শের মাধ্যমে পৃথিবীতে শান্তি-সৌহার্দ্য সামা-মানবতা প্রতিষ্ঠা করেন।
বক্তারা আরো বলেন, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর পক্ষ হতে মহা নেয়ামত হিসেবে এ ধরাতে আগমন করেন, আল্লাহ পাকের নির্দেশ এ নেয়ামত প্রাপ্তিতে খুশি উদযাপন করা। তাই নেয়ামত স্বরূপ আয়োজিত আজকের এ জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদুন্নবী (স.)। রাসুলে পাকের সর্বোত্তম আদর্শ অনুসরনের মাধ্যমে শান্তিময় সমাজ বিনির্মানের আহবান জানিয়েছেন বক্তারা। জুলুসে নগরীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লাখো লাখো নবী প্রেমিক জনতার ঢল নামে।
এছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় হাজার হাজার নর নারী ফুলের পাপড়ী ছিটিয়ে রাসুল (সাঃ) এর আগমনের আনন্দে উদযাপিত জুলুসকে অভ্যর্থনা জানায়।
উল্লেখ্য, রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ৪০ তম বংশধর কাদেরিয়া তরিকার উজ্জ্বল নক্ষত্র, যুগশ্রেষ্ঠ আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ রহমাতুল্লাহির নির্দেশেই আন্জুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট এদেশে
সর্বপ্রথম জুলুস ১৯৭৪ সালের ১২ই রবিউল আউয়াল আয়োযন করেছেন। চট্টগ্রামের বলুয়ার দীঘি পাড়স্থ খানকায়ে কাদেরিয়া ছৈয়্যদিয়া তৈয়্যবিয়া হতে বের হয়ে এশিয়া বিখ্যাত দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ষোলশহর জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলীয়া ময়দানে এসে এক বিশাল সমাবেশের মাধ্যমে সমাপ্ত হয়। প্রতি বছর এ দিনে এ ধারাবাহিকতা চলতে থাকে এবং ব্যাপ্তি লাভ করে। বর্তমানে এ জুলুস চট্টগ্রাম আলমগীর খানকা শরীফ থেকে বের হয়ে জামেয়া ময়দানে সমাপ্ত হয়।
পরবর্তীতে হুজুর কেবলার নির্দেশে আন্জুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট ৯ রবিউল আউয়াল একই নিয়মে রাজধানী ঢাকায়ও জশনে জুলুসের আয়োজন করে আসছে। পরবর্তীতে এ জুলুছ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে বিভিন্ন ধর্মীয় সংস্থা ও সিলসিলার পীর-মাশায়েখদের উদ্যোগে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, সিলেট, কুমিল্লাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ‘জশনে-জুলুছ’ এর আয়োজন শুরু হয়। এমনকি বর্তমানে জাপান, আমেরিকা, মিশর, ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তানসহ বিভিন্ন দেশে জশনে জুলুস উদ্যাপিত হচ্ছে। ব্রুনাই ও মালয়েশিয়াসহ কোন কোন মুসলিম দেশে বহু আগে থেকেই রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় জশনে জুলুসে ঈদ-এ-মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উদযাপন হয়ে আসছে।
Leave a Reply