মাগুরায় সদর উপজেলার জগদল ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে দুই মেম্বার প্রার্থী সমর্থদের মধ্যে সহিংসতায় চারজন নিহত হয়। শুক্রবার (১৫ অক্টোবর) বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর আতঙ্কের জনপদরে নাম জগদল।
হামলা আর গ্রেপ্তার আতঙ্কে গ্রাম ছাড়ছে নারী-পুরুষ। লুটপাটের আশঙ্কায় বাড়ির মূল্যবান জিনিসপত্র সরিয়ে নিচ্ছেন গ্রামবাসী। পুরুষ শূণ্য হয়ে পড়েছে জগদলের পশ্চিম মাঝি পাড়া। শনিবার (১৬ অক্টোবর) সকাল থেকে ভ্যানে করে বাড়ির মালামাল অন্যত্র নিয়ে যায়।
আগামী ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য জগদল ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মেম্বার প্রার্থী হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুক্রবার বিকালে দুই পক্ষের সংঘর্ষে প্রাণ হারায় চারজন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী জগদল গ্রামের শিউলি ও শাবানা বলেন, হামলাকারীরা ধারালো রামদা দিয়ে উপর্যপুরি আঘাত করতে থাকে প্রতিপক্ষের লোকদের ওপর। হামলাকারীরা লাথি মেরে রহমান ও কবিরসহ অনেকেই পুকুরে ফেলে দেয়। তারপর তাদের মৃত্যু নিশ্চিত করতে আবার হামলা চালায়। রামদার আঘাতে মৃত্যুপ্রায় সবুর মোল্লা পানি পানি বলে কাতরাতে থাকে। প্রত্যক্ষদর্শী নারীরা পানি নিয়ে সবুরকে খাওয়ানোর জন্য এগিয়ে এলে তাদের প্রতি উদ্যত হয় হামলাকারীরা।
নিহত কবিরের মেয়ে চাঁদনি আক্তার জানায়, আমার বাবা মানুষের বিপদ আপদের কথা শুনলে সঙ্গে সঙ্গে ছুটে যেতেন। বাবার চাচাতো ভাইকে মারা হচ্ছে এ খবর শোনার সঙ্গে সঙ্গে বাবা ছুটে যান ঘটনাস্থলে তার ভাইকে উদ্ধার করতে। ভাইকে উদ্ধার করতে যাওয়া মাত্রই হামলাকারীরা ঝাঁপিয়ে পড়ে আমার বাবার ওপর। হামলাকারীদের নৃশংসতায় আমার বাবাও ফিরল লাশ হয়ে।
নিহত সবুরের ভাই হাবিবুর জানান, দুর্বৃত্তরা একই সঙ্গে আমার দুই ভাইকে হত্যা করেছে। এর আগেও দুর্বৃত্তরা ২০০৩ সালে আমার আরেক আপন ভাই জরিপ মোল্লাকে হত্যা করে। প্রভাবশালীদের চাপে আমরা মামলা তুলে নিতে বাধ্য হই।
এদিকে, চার খুনের ঘটনায় চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে জগদল গ্রামে। বাড়ির আসবাবপত্র ধান, চাল,গবাদি পশু নিয়ে নিরাপদ স্থানে ছুটে যাচ্ছেন গ্রামের নারী পুরুষ। জগদল গ্রামের মো. সুমনের স্ত্রী সান্ত্বনাকে দেখা গেল তল্পিতল্পাসহ গ্রাম ত্যাগ করতে। তাকে জিজ্ঞেস করতেই তিনি জানান, আমার স্বামীসহ পরিবারের পুরুষ সদস্যরা বাড়ি ছেড়েছে। আমি মেয়ে মানুষ বাড়িতে একা অবস্থান করায় চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
আগামী ১১ নভেম্বর জগদল ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে জগদল ৩নং ওয়ার্ডের বর্তমান মেম্বার নজরুল ইসলাম প্রার্থী। একই সঙ্গে সৈয়দ হাসানও ৩নং ওয়ার্ডে মেম্বার প্রার্থী। প্রার্থিতা নিয়েই নজরুল ইসলাম ও সৈয়দ হাসানের সমর্থকদের মধ্যে এই সংঘর্ষ হয়। এতে চারজন মারা যায়।
এ বিষয়ে মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরুল হাসান বলেন, হত্যাকান্ডের ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চারজনকে আটক করা হয়েছে। মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সাধারণ মানুষের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।
Leave a Reply