জয়পুরহাটে সরকারি বেসরকারী কর্মকতা-কর্মচারীদের এক দিনের বেতনের টাকায় গঠন করা তহবিল থেকে জয়পুরহাট জেলাকে ভিক্ষুক মুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয় তিন বছর আগে। তহবিলে জমা হয় অর্ধকোটির বেশি টাকা। এরপর ও উদ্যোগটি চলছে ধীরগতিতে। ৩ বছরে জেলার মাত্র ২১ জন ভিক্ষুককে সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
তহবিলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে ও ভিক্ষুকমুক্ত করার তহবিলে টাকা জমা হয়। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জনবল সংকট ও করোনা পরিস্থিতির কারণে ভালো উদ্যোগটি ও বাস্তবায়নে দেরি হচ্ছে। তবে শিগগিরই পুনর্বাসনের কাজ শুরু হবে।
২০১৭ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক মোকাম্মেল হক জয়পুরহাট জেলাকে ভিক্ষুকমুক্ত করার উদ্যোগ নেন। তখন একটি কমিটি ও গঠন করা হয়। এর সভাপতি হন জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও সদস্য সচিব অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক)।
কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, জেলার সব সরকারি বেসরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীর ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসের এক দিনের বেতন-ভাতার টাকা ভিক্ষুকমুক্ত করার তহবিলে জমা দেওয়ার জন্য পাঁচটি উপজেলার ইউএনও দের নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে জেলার সব পৌরসভার মেয়র ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে নিজ নিজ ইউনিয়নের ভিক্ষুকদের তালিকা করে তা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমা দিতে বলা হয়। পরে জেলা প্রশাসন আক্কেলপুর উপজেলার রুকিন্দীপুর ইউনিয়নের ২১ জন ভিক্ষুককে সহায়তা দেয়।
পরে জেলা প্রশাসক মোকাম্মেল হক বদলি হয়ে চলে যান। এরপর থেকে ভিক্ষুকমুক্তকরণ কার্যক্রম অনেকটায় ঝিমিয়ে পড়ে। তিন বছরে তহবিলে কত টাকা জমা হয়েছে, তা জানতে সম্প্রতি তথ্য অধিকার আইনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আবেদন করেন এই প্রতিবেদন। ২ অক্টোবর প্রশাসনের তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা প্রতীক কুমার কুন্ডু স্বাক্ষরিত দুই পাতার প্রতিবেদন সরবরাহ করা হয়।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, একটি বে-সরকারী ব্যাংকের জয়পুরহাট শাখায় ভিক্ষুকমুক্তকরণ ও পুনর্বাসন নামের তহবিলে মোট ৬৫ লাখ ৯৮ হাজার ৮৩৫ টাকা জমা হয়। এর মধ্যে আক্কেলপুর উপজেলার রুকিন্দীপুর ইউনিয়নের ২১ জন ভিক্ষুককে ছাগল-মুরগী, ঢেউটিন ও অর্থ দিয়ে সহায়তা করা হয়েছে। তাঁদের সহায়তার খরচ হয় ২ লাখ ৯ হাজার ৪৪০ টাকা। ব্যাংকে এখন ৬৩ লাখ ৮৯ হাজার ৩৯৫ টাকা জমা আছে।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উদ্যোগ নেওয়ার পর পুনর্বাসন কমিটির কাছে পৌরসভার মেয়র ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা ২ হাজার ২০০ জন ভিক্ষুকের তালিকা দিয়েছিলেন। কিন্তু কমিটির কাছে মনে হয়েছে, বাস্তবে জেলায় এত ভিক্ষুক নেই। তাই পরে ভিক্ষুক শনাক্ত করতে স্থানীয় কয়েকটি বে-সরকারি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এসব সংস্থা ভিক্ষুকদের তালিকা জমা দিয়েছে। তবে জেলা প্রশাসন থেকে সংখ্যাটি জানা সম্ভব হয়নি। জেলাকে ভিক্ষুকমুক্ত করার কাজ অত্যন্ত জটিল ও কঠিন।
বর্তমান জেলা প্রশাসক শরীফুল ইসলাম বাংলা টাইমসকে বলেন, করোনার কারণে বাস্তবায়নের কাজ বিলম্বিত হয়েছে। এ ছাড়া অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ও বদলি হয়েছেন। আর ও দু-একজন বদলির অপেক্ষায়। এরপর ও চলতি বছরেই উদ্যোগটি বাস্তবায়নে কাজ শুরু করা হবে বলে তিনি জানান।
Leave a Reply