ইসলামে প্রতারণা করা বা কৌশলে অন্যকে ঠকানো কবিরা গোনাহ তথা হারাম। এ ছাড়াও এটাকে মুনাফিকের অন্যতম স্বভাব বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, এরা আল্লাহ ও তার নেক বান্দাদের সঙ্গে প্রতারণা করে যাচ্ছে। অথচ তারা অন্য কাউকে নয় নিজেদের সঙ্গেই প্রতারিত করছে। এটাকে তারা উপলব্ধিও করতে পারছে না। (আসলে) এদের কলবে রয়েছে ব্যাধি। (প্রতারণার কারণে) আল্লাাহ তাদের ব্যাধি আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন। তাদের জন্য রয়েছে তার পক্ষ থেকে লাঞ্চনাদায়ক শাস্তি। কেননা তারা মিথ্যা বলেছিল। সুরা বাকারা, আয়াত নং ৯-১০।
হাদিসে এসেছে, যারা ধোঁকা ও প্রতারণায় লিপ্ত হবে তারা রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মত থেকে বের হয়ে যাবে। অর্থাৎ তারা আর নবিজির উত্তরসূরি থাকবে না। এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে প্রতারণা করে, সে আমার দলভুক্ত নয়। মুসলিম, হাদিস নং ১০২।
মানুষ দৈনন্দিন জীবনে ইচ্ছায় অনিচ্ছায় কথায়-কাজে, লেন-দেনে এবং ব্যবসা-বানিজ্যে ধোঁকা বা প্রতারণা যেকোনো উপায় করতে পারে। তবে এটাকে সমর্থন করা অন্যায়। কখনো হয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে তওবা করে। কারণ ইসলাম এগুলোকে অবৈধ ঘোষণা করেছে। এর মন্দ পরিণাম সম্পর্কে আল্লাহ কোরআনে ইরশাদ করেছেন, মন্দ পরিণাম তাদের জন্য, যারা মাপে কম দেয়। যারা লোকদের কাছ থেকে মেপে নেয়ার সময় ঠিকই পূর্ণ মাত্রায় গ্রহণ করে কিন্তু যখন তার বিনিময় প্রদান করে তখন মাপে বা ওজনে কম দেয়। সুরা মুতাফফিফিন, আয়াত নং ১-৩।
যারা বিভিন্ন কারণে প্রতারণা বা ধোঁকাবাজির সঙ্গে জড়িত; তাদের পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ। পরকালে তাদের অবস্থান জাহান্নাম। হাদিসে এসেছে, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, প্রত্যেক ধোঁকাবাজ ও প্রতারক জাহান্নামী। অন্য হাদিসে আরো এসেছে, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, পাঁচ ব্যক্তি জাহান্নামী হবে। তাদের মধ্যে অন্যতম একজন হচ্ছে, যে সকাল-সন্ধ্যা সর্বাবস্থায় কারও ধন-সম্পদ ও পরিবার-পরিজন সম্পর্কে ধোঁকা দেয়। মুসলিম।
ইসলামে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে ওজনে কম দেওয়ার শাস্তি অনেক। হাদিসে এসেছে, হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, একবার হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো এক খাদ্যবস্তুর স্তুপের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন; তখন তিনি খাদ্যবস্তুর স্তুপে হাত ঢুকিয়ে দেখলেন যে, এর ভেতরে সিক্ত। তখন তিনি বললেন, হে খাদ্যের মালিক! এটি কি? জবাবে খাদ্যের মালিক বলল, হে আল্লাহর রসুল! বৃষ্টির কারণে এরূপ হয়েছে। এ কথা শুনে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি ভেজা খাদ্যশস্য ওপরে রাখলে না কেনো?
তাহলেতো ক্রেতাগণ এর অবস্থা দেখতে পেতো (প্রতারিত হতো না)। যে ধোঁকা দেয় সে আমার উম্মতের মধ্যে গণ্য হবে না।
মিশকাত।
যারা প্রকৃত মুসলমান তারা কখনোই আলামতের খেয়ানত করে না। অন্যের সম্পদ তারা অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করে না। সবসময় তারা আমানত রক্ষা করা। এ প্রসঙ্গে কোরআনে আল্লাহ বলেন, আর (তারাই প্রকৃত মুমিন) যারা আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে। সুরা মুমিনুন, আয়াত নং ৮।
যারা অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ করে তাদের জন্য দুনিয়া ও আখেরাতে অকল্যাণ রয়েছে। এ প্রসঙ্গে হাদিসে এসেছে, হযরত ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, কেয়ামতের দিন আমানতের খেয়ানতকারীকে হাজির করে বলা হবে, তোমার কাছে গচ্ছিত আমানত ফিরিয়ে দাও। সে জবাব দেবে, হে আমার প্রভু, কীভাবে তা ফিরিয়ে দেব? পৃথিবী তো ধ্বংস হয়ে গেছে। তখন তার কাছে গচ্ছিত রাখা জিনিসটি যেভাবে রাখা হয়েছিল ঠিক অনুরূপভাবে জাহান্নামের সবচেয়ে নিচের স্তরে তাকে দেখানো হবে। অনন্তর তাকে বলা হবে, যাও, ওখানে নেমে ওটা তুলে আনো।
অতঃপর সে নেমে গিয়ে সেটি কাঁধে বয়ে নিয়ে আসবে। তার কাছে জিনিসটির ওজন পৃথিবীর সব পাহাড়ের চেয়ে বেশি মনে হবে। তার ধারণা হবে, তুলে আনলেই সে দোজখের আগুন থেকে নাজাত পাবে।
কিন্তু সে যখন জাহান্নামের শেষ প্রান্তে চলে আসবে, তখনই ওই জিনিসটি নিয়ে পুনরায় জাহান্নামের সবচেয়ে নিচের স্তরে পড়ে যাবে। এভাবে সে চিরকালই জাহান্নামে থাকবে।
লেখক : মুহাদ্দিস, খাদিমুল ইসলাম মাদরাসা, কামরাঙ্গীর চর, ঢাকা।
Leave a Reply