ভাড়া না দেওয়ায় মুন্সিগঞ্জ সংলগ্ন মেঘনা নদীতে ৪ শিশুকে লঞ্চ “ইমাম হাসান-৫” থেকে নদীতে ফেলে দেওয়ার অভিযোগটি পুলিশের কাছে মিথ্যা বলেছিলো শিশুরা। ঘটনায় নদী থেকে ভাসমান অবস্থায় পুলিশের উদ্ধার করা শিশু মেহেদুল এবং অপর দুই শিশু সিয়াম ও তরিকুল নিজেরাই বিষয়টি স্বীকার করেছে।
মূলত চার শিশুর মধ্যে শাকিব অপর আরেক শিশুকে নদীতে ফেলে দেওয়ার পর বাকি ৩ জন নিজেরাই নদীতে ঝাঁপিয়ে পরেছিলো। পরবর্তী ভাসমান অবস্থায় পুলিশ শাকিব ও মেহেদুলকে উদ্ধার করলে পুলিশের কাছে বিষয়টি লুকাতে শাকিব ও মেহেদুল মিথ্যা কথা বলে । সোমবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাতে একটি ভিডিও অকপটে এই কথাগুলো বলে।
ভিডিওতে দেখা যায়, ভাসমান অবস্থায় পুলিশ উদ্ধার করা দুই শিশুর মধ্যে মেহেদুল (১৩)ও অপর দুই শিশু সিয়াম(১০) ও তরিকুল (১০) ।
গজারিয়া থানা পুলিশের মাধ্যমে উদ্ধার হওয়া শিশু মেহেদুল জানান, নদীতে ভাসমান অবস্থায় পুলিশকে দেখে শাকিব লঞ্চের স্টাফরা নদীতে ফেলে দিছে বলে পুলিশের কাছে বলতে শিখিয়ে দেয়। পরবর্তীতে পুলিশ তাদের উদ্ধার করলে শাকিব নিজেই পুলিশের কাছে বলে তাদের লঞ্চের স্টাফরা ফেলে দিয়েছে।
অন্য দুই শিশু বলেন, সদরঘাট থেকে তারা লঞ্চে উঠেছিলো। সেখান থেকে মুন্সিগঞ্জ লঞ্চঘাটে কাছে পৌছে মাজ নদীতে যাত্রী উঠা নামা করা ট্রলার যোগ তাদের পাড়ে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিলো। তবে মুন্সিগঞ্জে ট্রলার নামতে গেলে করে ট্রলার চালকরা নামতে দেয় না। পরে চাঁদপুরের অভিমুখে চলতে থাকা লঞ্চ থেকে সঙ্গীদের নদীতে লাফ দিতে বলে সাকিব। তবে কেউ লাফ না দিলে সাকিব তাদের মধ্যে থাকা তরিকুলকে নদীত ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। এরপর একে একে নদীতে ঝাপ দেয় অপর তিনজন। পরবর্তীতে সিয়াম ও তরিকুল সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও ভাসতে থাকে মেহেদুল ও শাকিব।
ভিডিওতে শিশুরা আরও জানায়, লঞ্চের স্টাফ ও পুলিশ কেউ তাদের সাথে খারাপ আচরণ করেনি।
নৌ-পুলিশের পুলিশ সুপার মিনা মাহমুদা জানান, গজারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দুটি শিশুকে উদ্ধার করে নদীর থেকে। যা ভিডিও ভাইরাল হয়। যার জন্য আমাদের মুক্তারপুর নৌ পুলিশের আইসি বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। ভিডিওর মধ্যে স্পষ্ট যে দুই শিশু বলে তাদেরকে লঞ্চ থেকে ফেলে দেওয়া হয়। আমাদের মামলা করতে হয় এবং তদন্ত করবে। যদি লঞ্চ কর্তৃপক্ষ তাদেরকে ফেলেনা দেওয়া থাকে তাদের বাদ শিশুরা যদি নিজেরাই ঝাঁপ দিয়ে থাকে তদন্ত রিপোর্টের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত,গত শনিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টার দিকে মুন্সিগঞ্জে মেঘনা নদীতে ভাসমান অবস্থায় শাকিব (১২) ও মেহেদুল (১৩) নামের দুই শিশুকে উদ্ধার করেছে গজারিয়া থানার ভারপ্রা তাদের উদ্ধার করা হয়। এসময় উদ্ধারকৃত শিশুদের দাবি, পানি বিক্রির জন্য রাজধানীর সদরঘাট থেকে ‘ইমাম হাসান-৫’ নামের একটি লঞ্চে উঠেছিল তারা। ভাড়া না দেওয়ায় তাদের মেঘনা নদীতে ফেলে দেন লঞ্চের স্টাফরা। প্রথম থেকেই লঞ্চ “ইমাম হাসান-৫” এল মাস্টার দেলোয়ার হোসোন ও অন্যান্যরা ফেলে দেওয়ার বিষয়টি অসত্য হিসাবে দাবি করছিলো।
অন্যদিকে নদী থেকে শিশুদের উদ্ধার হওয়ার ঘটনায় রবিবার (১২আগষ্ট) সন্ধ্যায় মুন্সিগঞ্জের মুক্তারপুর নৌপুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ মো. লুৎফর রহমান বাদী হয়েছে সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। মুন্সিগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দিক জানান, চার শিশুকে পানিতে ফেলে হত্যার চেষ্টার মামলা হয়েছে। মামলা তদন্ত করবে নৌপুলিশ।
Leave a Reply