সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার মাঠে ফুটেছে পদ্মফুল। যাকে জলজ ফুলের রানী বলা হয়। ভাদ্রের মাঝামাঝি সময়ে কলি থেকে ফুল ফোটা শুরু হয়ে এখন আশ্বিনের শুরুতেও তা চলমান রয়েছে। শীতের আগমনী পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন জলজ উদ্ভিদ গবেষকরা।
তাড়াশ উপজেলার সদর ইউনিয়নের সোলাপাড়া মাঠে ও মাগুড়া বিনোদ ইউনিয়নের দোবিলা ও ঘরগ্রামের মাঠে ফুটেছে পদ্মফুল। শুধু তাই নয় পার্শবর্তী গুরুদাসপুর উপজেলায় একটি মাঠ শুধু পদ্মফুলের অভয়ারন্য।
তাড়াশ উপজেলার সোলাপাড়া গ্রামের দুলাল চন্দ্র জানান, চারদিকে পুকুর খনন করার ফলে আমাদের ফসলি মাঠগুলো সারাবছর জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে জমিগুলোতে পানিতে ডুবে থাকে। ফলে গত বছর মাত্র তিনটি পদ্মফুলের গাছ তুলে নিয়ে এসে লাগিয়েছিলাম। এখন আমার ২ বিঘা জমিসহ পাশের অন্যও জমিগুলোতে হাজার হাজার গাছ ও পদ্মফুল ফুটছে। দেখতে যেন এক অপরুপ দৃশ্য। তিনি আরো বলেন, পদ্মফুলের সৌন্দের্য অনেক লোকজন আসে দেখতে। আবার কেউ কেউ কোমর পানি ডিঙিয়ে ফুল তুলে নিয়ে যায়।
জানা যায়, এক কালে চলনবিলে হরেক রকম জলজ উদ্ভিদ পাওয়া যেতো। বিলের বিভিন্ন প্রান্তরে ফুটে থাকতো শাপলা ও পদ্ম। পদ্ম ফোটার সেই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য মানুষ কে আবেগ তাড়িত করতো। বিলের মানুষ পদ্মপাতায় ভাত খেতো। হাট থেকে লবণ, জিলেপি ও গুড় পদ্মপাতায় মুড়িয়ে নিয়ে আসতো। বিলের জলাধার দিনের পর দিন কমতে থাকায় ধীরে ধীরে তা হারিয়ে যায়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পদ্মফুল জন্মে। এগুলো কে বৈশিষ্ট্য অনুসারে দুটি প্রজাতিতে ভাগ করা হয়। এর মধ্যে একটি হচ্ছে এশিয়ান বা ইন্ডিয়ান পদ্ম,অন্যটি হচ্ছে আমেরিকান বা ইয়োলো লোটাস। এশিয়ান পদ্ম আবার দুই রঙ্গে দেখা যায়, একটি মসৃণ সাদা অপরটি হালকা গোলাপি।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাবরিনা নাজ প্রায় চার দশক পরে চলনবিলে পদ্ম ফিরে আসা প্রসঙ্গে বলেন, পদ্ম একটি বহুবর্ষজীবি জলজ উদ্ভিদ। পদ্মফুলের একটি পরিপক্ষ বীজ এক হাজার বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। অনুকূল পরিবেশ পেলে সে আবারও বংশ বিস্তার করে থাকে। চলনবিলে ফোটা পদ্মের ক্ষেত্রেও সেটিই হয়েছে। চলনবিলের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন নামে ১ হাজার ৭৫৭ হেক্টর আয়তনের ৩৯টি বিল। এ সব বিলে পদ্ম, শাপলা, মাখনা, সিঙ্গট, গেচু, চেচুয়া,ভাতসোলা সহ বহু প্রজাতির সপুষ্পক, ফার্ন, মস ও শৈবাল পাওয়া যেতো। এরমধ্যে অনেকগুলোই বিপন্ন এবং বেশ কিছু প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. মো. জামালের গবেষণাতেও প্রায় একই চিত্র উঠে এসেছে। তিনি ১৯৮৫ সাল থেকে ৮৭ সাল পর্যন্ত চলনবিল নিয়ে গবেষণা করেছিলেন। সেখানে তিনি তাড়াশ উপজেলায় বিলে পদ্ম দেখেছেন। কিন্তু এরপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের গবেষকরা এ অঞ্চলে আর কোনো পদ্ম ফুল দেখতে পাননি, বলছিলেন অধ্যাপক ড. সাবরিনা নাজ।
Leave a Reply