মহামারী করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে দীর্ঘ ১৮ মাস বন্ধ থাকার পর রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) খুলছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশণার পর ৩ সেপ্টেম্বর শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার ঘোষণা দেন।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার ঘোষণায় পর থেকে অপেক্ষার প্রহর গুনছে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। শিক্ষকরা কদিন ব্যস্ত ছিলেন পুনরায় শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর প্রস্তুতি নিয়ে। একদিকে তারা পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চালান।
সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী রুটিন তৈরির পাশাপাশি ক্লাসরুমে শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করে বসানো, হাত ধোয়া, অসুস্থ হলে বিশেষ কক্ষে পরিচর্যা ইত্যাদি প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
নির্দেশনা অনুযায়ী সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে চলছে শেষ মুহূর্তের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ। শহরাঞ্চলের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। তবে প্রত্যন্ত এলাকার অনেক স্কুল-কলেজে শুক্রবারও ধোয়ামোছার কাজ করতে দেখা যায়। কোনো কোনো স্কুলের সামনে এখনও আগাছা ও জলাবদ্ধতা দেখা যায়।
সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী, সব দিন শিক্ষার্থীদের স্কুলে যেতে হবে না। শুধু পিইসি, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা দৈনিক ক্লাস করবে। বাকিদের একদিন সরাসরি পাঠদান হবে। সপ্তাহের বাকি দিনগুলো অনলাইনে বা টেলিভিশনে দূরশিক্ষণে পাঠদান চলবে।
শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার সিদ্ধান্ত অনুাযায়ী ১০টি বিষয় বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। চেকলিস্টের মাধ্যমে দৈনিক তদারকি করা হবে প্রতিষ্ঠান, এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাঠাতে হবে ঢাকায়; শিক্ষার্থীদের দৈনিক সচেতন করা হবে; বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক ব্যবহার; হাত ধোয়ার ব্যবস্থা; দৈনিক প্রত্যেকের শরীরের তাপমাত্রা যাচাই- এজন্য গেটে ৩০ মিনিট সময় বরাদ্দ; প্রয়োজনে পিসিআর ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা; লক্ষণ থাকলে শিক্ষার্থীকে অনুপস্থিত হিসাবে বিবেচনা না করা; স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে ক্লাসরুমে বসানো; স্কুলে সমাবেশ না করা, তবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাসরুমে যার যার সিটে রেখে হালকা শারীরিক কসরত; পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখা; হোস্টেলে বিশেষ নির্দেশনা অনুসরণ।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণি পাঠদানের সময়সূচিতে উল্লেখ করা হয়েছে, শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন বাদে প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৯টা থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু হবে। ক্লাসে প্রথম ১০ মিনিট করোনা সচেতনতা বিষয়ে শিক্ষার্থীদের অবহিত করবেন শিক্ষক। এরপর ৯টা ৪০ মিনিটে মূল পাঠদান শুরু হবে। সবমিলে প্রতিদিন তিন ঘণ্টা করে ক্লাস চলবে।
শনিবার পঞ্চম ও চতুর্থ শ্রেণির তিনটি বিষয়ের পাঠদান অনুষ্ঠিত হবে। সকাল সাড়ে ৯টায় ক্লাস শুরু। এরপর ১০ মিনিট করোনা সচেতনতা বিষয়ে শিক্ষার্থীদের অবহিত করবেন শিক্ষক। সকাল ৯টা ৪০ মিনিট থেকে মূল পাঠদান শুরু হয়ে শেষ হবে দুপুর ১২টা ৫ মিনিটে।
একইভাবে একই সময়ে শনিবার চতুর্থ শেণির পর্যায়ক্রমে গণিত, ইংরেজি ও বাংলা বিষয়ের পাঠদান অনুষ্ঠিত হবে।
রোববার পঞ্চম ও তৃতীয় শ্রেণির তিনটি ক্লাস শুরু হবে। একইভাবে একই সময়ে তৃতীয় শ্রেণির পর্যায়ক্রমে বাংলা, গণিত ও ইংরেজি বিষয়ের পাঠদান অনুষ্ঠিত হবে।
সোমবার হবে পঞ্চম ও দ্বিতীয় শ্রেণির বাংলা, গণিত ও ইংরেজি বিষয়ের পাঠদান।
মঙ্গলবার হবে পঞ্চম ও প্রথম শ্রেণির ক্লাশ।
বুধবার সকাল সাড়ে ৯টায় ক্লাস শুরু। ১০ মিনিট কোভিড-১৯ সচেতনতা শেষে সকাল ৯টা ৪০ মিনিট থেকে মূল পাঠদান শুরু হবে। ক্লাস শেষ হবে দুপুর ১২টা ৫ মিনিটে।
বৃহস্পতিবারও সকাল সাড়ে ৯টায় ক্লাস শুরু। ১০ মিনিট কোভিড-১৯ সচেতনতা বিষয়ে অবহিত করে ক্লাস শুরু হবে সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে। শেষ হবে দুপুর ১২টা ৫ মিনিটে।
সকালে প্রথম শিফটে করোনা থেকে সুরক্ষা পেতে শ্রেণিকক্ষের চেয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি হলে দ্বিতীয় শিফট দুপুরের পর শুরু হবে। দ্বিতীয় শিফট প্রতিদিন বেলা ১টা ১৫ মিনিট থেকে বিকাল ৩টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত চলবে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) জানায়, শ্রেণিকক্ষে তিন ফুট দূরত্ব রেখে শিক্ষার্থীদের বসানো হবে। নতুন ক্লাস রুটিনে জানানো হয়েছে, ২০২১ সালের এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের সপ্তাহে শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার চারটি করে ক্লাস নেওয়া হবে। ২০২২ সালের এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের শনিবার ও রোববার চারটি ক্লাস হবে। এছাড়া ষষ্ঠ শ্রেণির ক্লাস সোমবার, সপ্তম শ্রেণির মঙ্গলবার, অষ্টম শ্রেণির বুধবার ও নবম শ্রেণির ক্লাস বৃহস্পতিবার নেওয়া হবে।
Leave a Reply