1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : Editor :
ইমামতি ছেড়ে রাগীবের প্রতারণা, ১৭ হাজার কোটি টাকা আত্মসাত - বাংলা টাইমস
বৃহস্পতিবার, ০১ জুন ২০২৩, ০৯:০৫ অপরাহ্ন

ইমামতি ছেড়ে রাগীবের প্রতারণা, ১৭ হাজার কোটি টাকা আত্মসাত

শিলা রানী
  • প্রকাশের সময় : শুক্রবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১
  • ৩৫৬ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে

পিরোজপুরের রাগীব আহসান ২০০৬-০৭ সালের দিকে ইমামতির পাশাপাশি একটি এমএলএম কোম্পানিতে মাত্র ৯০০ টাকা বেতনে চাকরি নেন। ২০০৮ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন একটি এমএলএম কোম্পানি।

 

ওয়াজ-মাহফিলের আয়োজন করে রাগীব নিজ প্রতিষ্ঠানের প্রচারণা চালাতেন। একসময় ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে শরিয়াহভিত্তিক সুদমুক্ত বিনিয়োগের ধারণা প্রচার করে ১০ হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে ১১০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে ব্যবসা শুরু করেন।

 

শুক্রবার (১০ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির সদর দফতরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

 

তিনি বলেন, সেই রাগীব এখন ১৫ মামলার আসামি। গ্রাহকের লভ্যাংশ তো দূরের কথা, বিনিয়োগের টাকা ফিরিয়ে না দিয়েই ২০১৯ সাল থেকে আত্মগোপনে যান তিনি। তার নিয়োজিত তিনশ মাঠকর্মীকেও বেতন দেননি। এভাবেই এ পর্যন্ত ১৭ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে রাগীবের মালিকানাধীন এহসান গ্রুপ।

 

এক সময় মসজিদে ইমামতি করতেন মাওলানা রাগীব আহসান। পরে ইমামতি ছেড়ে কাজ নেন ঢাকার একটি এমএলএম কোম্পানিতে। সেখানকার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে গড়ে তোলেন পিরোজপুরে এহ্সান রিয়েল এষ্টেট এন্ড বিল্ডার্স নামের প্রতিষ্ঠানটি।

 

বৃহস্পতিবার (৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় এহ্সান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাওলানা রাগীব আহসানের ভাই ও এহ্সান গ্রুপের সহকারী পরিচালক আবুল বাসার এবং রাগীবের আরেক ভাই ও প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা কমিটির সদস্য পিরোজপুর বাজার মসজিদের ইমাম মাহমুদুল হাসানকে গ্রেফতার করে পিরোজপুর সদর থানা পুলিশ।

 

র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, পিরোজপুরের এহসান রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড বিল্ডার্স লিমিটেডের বিরুদ্ধে লক্ষাধিক গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা করার অভিযোগ উঠে। গ্রুপটির বিরুদ্ধে ১৭ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তুলেছে গ্রাহকরা।

 

এর আগে রোববার (৫ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে লক্ষাধিক গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ তোলা হয়। গ্রাহকদের একাংশের অভিযোগ,প্রতিষ্ঠানটি ১৭ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে।

 

সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এহসান রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড বিল্ডার্সের পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুফতি রাগীব আহসান এলাকার মানুষের সঞ্চয়ী হিসাব চালু করেন। জমা করা টাকার ওপর মাসিক মুনাফা দেওয়ার কথা বলে পাসবইসহ বিভিন্ন ডকুমেন্ট দিয়ে টাকা জমা নেন। এলাকার মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে কয়েক মাস মাসিক মুনাফা দেয়ার পর বন্ধ করে দেন। এরপর নানা কথায় সময় পার করতে থাকে। একপর্যায়ে টাকা ফেরত চাইলে বিভিন্ন অজুহাতে টালবাহানা শুরু করে। এভাবে প্রায় তিন বছর চলার পর টাকা-পয়সা না দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দেয়া হয়।

 

২০১৯ সালে রাতের আঁধারে শের-ই-বাংলা পাবলিক লাইব্রেরির চতুর্থ তলায় এহসান গ্রুপের প্রধান কার্যালয় করে দেওয়া হয়। পরে জানা যায়, অফিস বন্ধের আগেই প্রতিষ্ঠানটি তাদের সব ডকুমেন্ট সরিয়ে ফেলে।

 

পিরোজপুর সদর থানার ওসি আ. জা. মো. মাসুদুজ্জামান জানান, অধিক মুনাফা দেওয়ার লোভ দেখিয়ে এহ্সান গ্রুপ নামের একটি কোম্পানীর মাধ্যমে মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে দায়েরকৃত মামলার প্রেক্ষিতে কোম্পানীর কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এহ্সান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাওলানা রাগীব আহসানের ভাই ও এহ্সান গ্রুপের সহকারী পরিচালক আবুল বাসার এবং রাগীবের আরেক ভাই ও প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা কমিটির সদস্য মাহমুদুল হাসানকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে রিমান্ড আবেদন করা হবে।

 

মামলার বাদী ভুক্তভোগী গ্রাহক হারুন-অর-রশিদ জানান, মাওলানা রাগীব আহসান প্রথমে এহ্সান রিয়েল এষ্টেট এন্ড বিল্ডাস নামে একটি কোম্পানী খুলে ধর্মের নামে সাধারণ মানুষদের প্রলোভন দেখিয়ে এবং অধিক মুনাফা দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে গ্রাহক বানিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেয়। পরবর্তীতে তিনি এহসান গ্রুপ নামে প্রতিষ্ঠানটির নামকরণ করে উক্ত প্রতিষ্ঠানের আড়ালে সাধারণ মানুষদের কাছ থেকে আদায় করা অর্থ দিয়ে আরও ১৪টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে পরিচালনা করেন।

 

তিনি জানান, এহ্সান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাগীব আহসান তাকে (হারুনর-অর-রশিদ) গ্রাহক এবং প্রতিষ্ঠানের মাঠ কর্মী বানিয়ে তার ১০ লক্ষ টাকাসহ তার আত্মীয়-স্বজন ও পরিচিতজনদের কাছ থেকে ৯ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এছাড়া পিরোজপুর, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ, খুলনা, ঝালকাঠীসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে লক্ষাধিক গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা নিয়ে আত্মসাত করেছেন মাওলানা রাগীব আহসান।

 

উল্লেখ্য, ২০১০ সালে পিরোজপুর সদর উপজেলার খলিশাখালী এলাকায় মাওলানা রাগীব আহসান ‘এহ্সান রিয়েল এষ্টেট এন্ড বিল্ডার্স’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান তৈরী করেন। পরবর্তী সময়ে কোম্পানীর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘এহ্সান গ্রুপ।’ আর এ প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হন মাওলানা রাগীব আহসান নিজেই। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটিতে তার তিন ভাই, বোন, তার শ্বশুর, বোন জামাইসহ নিকটাত্মীয়দের পরিচালকসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন পদে রাখা হয়।

 

পরে পিরোজপুর পৌর শহরের সিও অফিস মোড় সংলগ্ন বাইপাস সড়কের পাশে জামি কিনে সেখানে প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় স্থাপন করা করা। উক্ত জমিতে একাধিক ভবন নির্মান করে নূরে মদিনা প্রি-ক্যাডেট মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়।

 

জানা গেছে, এক সময় মসজিদে ইমামতি করতেন মাওলানা রাগীব আহসান। পরে ইমামতি ছেড়ে কাজ নেন ঢাকার একটি এমএলএম কোম্পানিতে। সেখানকার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে গড়ে তোলেন পিরোজপুরে এহ্সান রিয়েল এষ্টেট এন্ড বিল্ডার্স নামের প্রতিষ্ঠানটি। আর এ প্রতিষ্ঠানের নামে ধর্মভিরু লোকজনের দুর্বলতার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তাদের গ্রাহক করে হাতিয়ে নিতে থাকেন লাখ লাখ টাকা।

 

ইসলামি শরিয়াহ অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে লোকজনের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ শুরু করে প্রতিষ্ঠানটির মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা। বিভিন্ন মসজিদের ইমাম, মাদ্রাসার শিক্ষকদের নিয়োগ দেওয়া হয় মাঠকর্মী হিসেবে।

 

গ্রাহকদের বলা হয়, এক লাখ টাকার বিপরীতে মাসে দুই হাজার টাকা মুনাফা দেয়া হবে। এসব মুনাফার লোভ দেখিয়ে মানুষদের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে প্রতিষ্ঠানের মুলধন তৈরী করা হয়। শুরুতে কিছু গ্রাহকদের মুনাফার টাকা দিলেও পরবর্তীতে তা দেওয়া বন্ধ করে দেয় মাওলানা রাগীব আহসান। পরে গ্রাহকরা তাদের জমাকৃত টাকা ফেরৎ চাইলে তাও দেয়া হয়নি।

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায় সিসা হোস্ট