জয়পুরহাট জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন নিয়ে ধূম্রজাল কাটছে না। কেন্দ্রে দাখিল করা প্রস্তাবিত জেলা কমিটির অনুমোদন হয়ে গেছে – এমন খবর পাওয়ার পর দলের জেলা পর্যায়ের শীর্ষ নেতারা ঢাকায় অবস্থান করছেন।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, সদ্য ঘোষিত জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রস্তাবিত ৭৫ সদস্যের জেলা কমিটি অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রে তালিকা জমা দিয়েছেন। তালিকায় দলের দুঃসময়ের অনেক ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আত্মীয়-স্বজন ছাড়াও পছন্দের লোকদের নাম অন্তভূক্ত করেছেন। এমন অভিযোগ দলের বেশির ভাগ নেতার। এ নিয়ে দলের মধ্যে চাপা ক্ষোভ ও রয়েছে। এ অবস্থায় প্রস্তাবিত জেলা কমিটির তালিকা থেকে বাদ দেওয়া নেতাদের অনেকেই কেন্দ্রে অভিযোগ করেন।
বিষয়টি আমলে নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দাখিল করা প্রস্তাবিত কমিটি থেকে বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে দলের ত্যাগী নেতাদের নাম অন্তভূক্তির পর ২৯ আগষ্ট রবিবার তা অনুমোদন করেন দলটির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। গত ১ সেপ্টেম্বর বুধবার ৭৫ সদস্যের জয়পুরহাট জেলা আওয়ামী লীগের কমিটির নাম ঘোষণার পর তা দলের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করার কথা ছিল। কিন্তু কেন্দ্র থেকে অনুমোদিত জেলা কমিটি ঘোষণার আগেই প্রস্তাবিত কমিটি থেকে বিতর্কিতদের বাদ দেওয়ার বিষয়টি ফাঁস হয়ে যায়। ফলে কেন্দ্রে জমা দেওয়া প্রস্তাবিত কমিটিকে বহাল রাখার জন্য তদবির করতে ঢাকায় পাড়ি জমান দলের জেলা সভাপতি আরিফুর রহমান রকেট ও সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন মন্ডল।
অন্যদিকে, অনুমোদিত কমিটি কোনভাবেই যেন কাটাছেঁড়া না করা হয় সে জন্য ঢাকায় অবস্থান করছেন দলটির জেলা পর্যায়ের এক ডজনের ও বেশি নেতা।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ১০ ডিসেম্বর জয়পুরহাট ষ্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে সভাপতি পদে আরিফুর রহমান রকেট ও সাধারণ সম্পাদক পদে জাকির হোসেন মন্ডলকে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়। এরপর তাঁদের আওয়ামী লীগের জেলা কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে আক্কেলপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র অবসর চৌধুরী বলেন, “ছাত্রজীবন থেকে আমি আওয়ামীলীগ দল করছি। আমার বাবা আমৃত্যু লড়াই করেছেন আওয়ামী লীগের জন্য। জয়পুরহাট জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। অথচ প্রস্তাবিত জেলা কমিটির তালিকায় আমার নামই বাদ দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি কেন্দ্রীয় নেতাদের অভিযোগ করার পর সংশোধন করে ত্যাগী নেতাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক এস এম কামাল হোসেন আজকালের মধ্যে বিষয়টি সুরাহা করবেন বলে আমরা শুনেছি।”
জয়পুরহাট পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হোসেন হিমু বলেন, “জয়পুরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক নেতাদের বাদ দিয়ে কেন্দ্রে প্রস্তাবিত কমিটি অনুমোদনের জন্য জমা দেওয়া হয়েছিল। যেখানে দলের সাবেক জেলা কমিটির সহ-সভাপতি রাজা চৌধুরী, অ্যাডভোকেট গোকুল চন্দ্র, দপ্তর সম্পাদক মিজানুর রহমান টিটু, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, সদস্য শহীদ ইকবাল সদু, আক্কেলপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অবসর চৌধুরী সহ অনেক ত্যাগী নেতাদের বাদ দেওয়া হয়েছিল।
এ বিষয়ে অভিযোগের পর যাচাই-বাছাই করে কেন্দ্র বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে কমিটির অনুমোদন দিয়েছে। এ অবস্থায় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক তাঁদের জমা দেওয়া প্রস্তাবিত কমিটির অনুমোদন নেওয়ার চেষ্টা করছেন।”
জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও পাঁচবিবি উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরুল শহীদ মুন্না বলেন, “কমিটি নিয়ে নানা গুঞ্জন চলছে। দু-এক দিনের মধ্যেই জেলা কমিটির নাম ঘোষণা হওয়ার কথা শুনেছি। এ জন্য জেলার শীর্ষ পর্যায়ের বেশির ভাগ নেতা এখন ঢাকায় অবস্থান করছেন।”
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আরিফুর রহমান রকেট ও সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন মন্ডলের মোবাইল ফোনে বারবার যোগাযোগ করে ও ফোন না ধরায় তাঁদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
Leave a Reply