চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় চলতি বছরের আট মাসে (জানুয়ারি থেকে আগস্ট) পানিতে ডুবে অন্তত ১৫ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। মারা যাওয়া শিশুদের বয়স দুই থেকে আট বছরের মধ্যে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে পাঠানো সংবাদের তথ্য বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
এ সমস্ত শিশু মৃত্যুর স্থান আর সময় ভিন্ন হলেও তাদের মৃত্যুর কারণ একটাই। পরিবারের অজান্তেই খেলতে গিয়ে পুকুরে পড়ে যায়। আর সেখানেই তাদের মৃত্যু হয়। তাই প্রায় প্রতিটা মৃত্যুর ক্ষেত্রেই হাসপাতালে নেয়ার পর ডাক্তারের মুখ থেকে শুনতে হয় যে, হাসপাতালে আনার আগেই তারা মারা গেছে।
এরমধ্যে সর্বশেষ (২৫ আগস্ট ) বুধবার ১০নং হাইলধর ইউনিয়নের তেকোটা গ্রামে মুরসালিন (০৫) নামের এক শিশুর পুকুরের পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে মুরসালিন খেলতে গিয়ে বাড়ির পশ্চিমে থাকা পুকুরে পড়ে যায়। তারপর খোঁজাখুঁজি এক পর্যায়ে থাকে স্থানীয়রা পুকুরে দেখতে পেলে উদ্ধার করে আনোয়ারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।
অপরদিকে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে উপজেলার বরুমছড়া ইউনিয়নে দুপুর দেড়টার দিকে বাড়ির আঙিনায় খেলতে গিয়ে পুকুরে ডুবে আযান (০২) নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়।১ মার্চ উপজেলার ১০ নং হাইলধর ইউনিয়নের ইছাখালী গ্রামে একসাথে পুকুরে পড়ে রিতু আকতার (৮) ও হামদান (২) নামের দুই ভাই-বোনের মৃত্যু হয়।
৪ এপ্রিল একই ইউনিয়নের পীরখাইন গ্রামের ফারজানা মাহমুদ ওহী (০৭) নামের ২য় শ্রেণীর এক শিক্ষার্থীর পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়।
২৫ মে উপজেলার ৮নং চাতুরী ইউনিয়নের রুদুরা গ্রামের মো. হেলাল (৪) নামে এক শিশু পরিবারের অজান্তে পুকুরে পড়ে মৃত্যু হয়।
জুন মাসে শুধু মাত্র পানিতে ডুবে তিন শিশুর মৃত্যু হয়। যার মধ্যে ১১ জুন (শুক্রবার) ৮নং চাতরী ইউনিয়নের কৈণপুরা গ্রামের মহাজন পাড়া এলাকায় অতুল মহাজন (৫), ১২ জুন (শনিবার) উপজেলার ১০নং হাইলধর ইউনিয়নের পীরখাইন পশ্চিম পাড়ার হামেদ হাসান (২) এবং ১৪ জুন (সোমবার) উপজেলার ৬নং বারখাইন ইউনিয়নের তৈলারদ্বীপ গ্রামে মোঃ তাহমিদ (২)।
এছাড়া জুলাই মাসেই একনাগাড়ে ৪জন শিশুর পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়ে সারা বছরের মধ্যে বেশি শিশু মৃত্যুর রেকর্ড হয়েছে। পহেলা জুলাই ১০ নং হাইলধর ইউনিয়নের ইছাখালী গ্রামের সোহান (২), ১৩ জুলাই ৯ নং পরৈকোড়া ইউনিয়নের বাথুয়া পাড়া গ্রামের প্রান্ত সর্দ্দার (৬) এবং ৩০ শে জুলাই উপজেলার ১১ জুইদন্ডি ইউনিয়নের তাসনুভা তাবাসসুম তানিশা (৫) আর তার ফুফাতো বোন মোছাম্মৎ তায়্যিবাহ (৩) নামের ২মামাতো ফুফাতো বোনের একসাথে পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়।
আগস্ট মাসের ১তারিখ উপজেলার ৩নং রায়পুর ইউনিয়নের চুন্নাপাড়া গ্রামে মাছ ধরতে গিয়ে বিলের পানিতে ডুবে হাবিবা আক্তার (৯) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। ৪ তারিখ ৩নং রায়পুর ইউনিয়নের পরুয়া পাড়া এলাকার তামিম (২) নামের এক শিশুর পুকুরে ডুবে মৃত্যু হয়।
এসব মৃত্যুর ঘটনার অধিকাংশ সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টার মধ্যে। কারণ এসময় শিশুদের মায়েরাসহ পরিবারের লোকজন রান্নাসহ গৃহস্থালির বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকেন। আর বাবারা থাকেন ঘরের বাইরে।
চলতি বছরের ২৫ জুলাই “যে কেউ পানিতে ডুবে যেতে পারি, সবাই মিলে প্রতিরোধ করি” এই স্লোগানকে সামনে রেখে বিশ্বে প্রথম বারের মতো পালিত হলো ” বিশ্ব পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধ দিবস” । পানিতে ডুবে মৃত্যু একটি বড় ধরনের জনস্বাস্থ্য সমস্যা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বে প্রতি বছর ২ লাখ ৩৬ হাজার মানুষ পানিতে ডুবে মারা যায়। যারমধ্যে বেশি মৃত্যু ঘটে এশিয়া এবং আফ্রিকাতে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু জাহিদ মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন জানান, পুকুরে ডুবে শিশু মারা যাওয়া কারণ হচ্ছে শিশুদের সাঁতার না জানা, তাৎক্ষণিক প্রাথমিক চিকিৎসার জ্ঞান না থাকা ও সচেতনতার অভাবেই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। আর এমন অনেক পুকুরে ডুবা শিশু রয়েছে যাদের তাৎক্ষণিক প্রাথমিক চিকিৎসা ব্যবস্থা ও যথাসময়ে হাসপাতালে আনার কারণে তাদেরকে বাঁচানো সম্ভব হয়েছে।
উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা রাবেয়া চৌধুরী এর সাথে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর হার নিয়ন্ত্রণের বিষয় নিয়ে পানিতে কথা হলে তিনি বাংলা টাইমসকে জানান, আসলে পুকুরে ডুবে শিশু মৃত্যুুর বিষয়টি পরিবারের অসচেতনতার কারনেই হয়ে থাকে তাই এই বিষয়টি নিয়ে নারী ও শিশুদের যেসমস্ত বৈঠক এবং দিবস পালন করা হয় আমরা সবখানে এই বিষয়টি আলোচনায় রাখবো। যাতে সবার মাঝে বিশেষ করে মা’দের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি পায়।
Leave a Reply