1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : Editor :
ভাল নেই গরীবের ডাক্তার ইয়াকুব - বাংলা টাইমস
বুধবার, ২২ মার্চ ২০২৩, ০৯:১৮ পূর্বাহ্ন

ভাল নেই গরীবের ডাক্তার ইয়াকুব

জয়পুরহাট প্রতিনিধি
  • প্রকাশের সময় : শুক্রবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১
  • ১৬০ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে

হতদরিদ্র মানুষদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে যাচ্ছেন জয়পুরহাট সদর উপজেলার সিট হরিপুর গ্রামের সুক্টি পাড়া এলাকার সত্তর বছর বয়সী ইয়াকুব আলী। দীর্ঘ প্রায় এক যুগ ধরে দরিদ্র মানুষদের চিকিৎসা সহ মানবিক সেবা করতে গিয়ে নিজের জমি-জমা ও বিক্রি করে এখন তিনিও দাঁড়িয়েছেন দরিদ্রদের সারিতে।

 

তারপরও থেমে নেই তার মানব সেবা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত বাড়ি বাড়ি ঘুরে দরিদ্র পরিবারের শিশু ও নারী-পুরুষের মাঝে তিনি ঔষধ বিতরন করেন চিকিৎসকের পরামর্শ পত্র দেখে।

 

প্রাতিষ্ঠানিক কোন ডিগ্রী না থাকলেও জয়পুরহাট শহর থেকে শুরু করে সদর উপজেলার আশ-পাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের আবাল বৃদ্ধ বনিতা তাকে চেনেন বিনা মূল্যের চিকিৎসক, ডাক্তার ইয়াকুব ভাই। দরিদ্র ও অসহায় মানুষদের কাছে সে গরীবের ডাক্তার হিসেবে পরিচিত।

 

সকালে ঘুম থেকে উঠে এ গ্রাম ওই গ্রাম ঘুরে রোগীদের খোঁজ খবর নিয়ে যান পল্লী চিকিৎসকের কাছে, সদরের সরকারি হাসপাতালে, আবার জরুরী হলে রোগীদের নিয়ে যান সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের কাছে। এ ভাবে চিকিৎসকদের পরামর্শ পত্র দেখে ঔষধ সংগ্রহ করে পায়ে হেঁটে ওই সব রোগীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তা বিতরন করেন অসহায় দরিদ্র রোগীদের কাছে। ১৫ বছর ধরে এসব মানব সেবা করতে গিয়ে তাকে পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া জমিও বিক্রি করতে হয়েছে বলেও জানান এলাকাবাসী।

 

ইয়াকুব আলী সাত্তাত্তর বছর বয়সের একজন বৃদ্ধ। মৃত শুকুর আলী মন্ডল ও মৃত বুদিমন বেওয়ার মেজো ছেলে। বাবা কৃষিকাজ ও মা গৃহিনী ছিলেন। বাবার রেখে যাওয়া অল্প কিছু জমিতে তিনি নিজেও কৃষিকাজ করা ছাড়াও আর্টিষ্টেরও কাজ করেন। চার বছর আগে তার স্ত্রী মারা গেছেন। ইয়াকুব আলীর তিন মেয়ে ও দুই ছেলে। তিন মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। বড় ছেলে তাহেরী জুতার দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করে । ছোট ছেলে নাহিদ একটি বেসরকারী কোম্পানিতে চাকুরি করে।

 

ইয়াকুব পাশর্^বর্তী স্কুল থেকে ১৯৬৮ সালে এসএসসি পাশ করেন। দরিদ্র পরিবারের কারণে লেখাপড়া বেশিদূর না এগুলো ও ওই সময় থেকেই মানব সেবায় নিজেকে নিয়োগ করেন। ১৫ বছর ধরে শহর থেকে পাশ্ববর্তী ২০/২৫টি গ্রামের কোন না কোন পাড়া-মহল্লার বাড়ি বাড়ি গিয়ে অসুস্থ মানুষের খোঁজ নেন তিনি। চিকিৎসকের পরামর্শ পত্র দেখে ঔষধ সংগ্রহ করে পায়ে হেঁটে ওই সব রোগীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিনামূল্যে ঔষধ বিতরন করেন ইয়াকুব আলী। এমনকি সীমান্তবর্তী ভারতের দরিদ্র নাগরিকদেরও তিনি ঔষধ দিয়ে থাকেন বলে জানা গেছে।

 

ইয়াকুব মানব সেবা করতে গিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। সংসারের প্রয়োজনে কৃষি ব্যাংক ঋণ নিয়ে শোধ করতে না পেরে জেলও খেটেছেন। তার শরীরের বাম বালের¦ অংশ বৃদ্ধি হলে চিকিৎসক দীর্ঘমেয়াদী ঔষধ খেতে বলেছেন। টাকার অভাবে অনেক সময় সে ঔষধ কিনে খেতেও পারেননা। তারপরও চিকিৎসাসেবায় দমে যাননি সত্তুরোর্দ্ধ বয়সী ইয়াকুব আলী। তিনি ভাদসা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি ও যুবলীগের সভাপতি ছিলেন। সদর থানা যুবলীগের এক নম্বর সহ সভাপতি ছিলেন। বর্তমানে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য।

 

সদর উপজেলার ভাদসা ইউনিয়নের ছিট বজরুক গ্রামের আমেনা বেগম ও মুকুল হোসেন, হরিপুর গ্রামের পেয়ারা বেগম ও নূরুন্নাহার বেগম, ভাদসার নজরুল,খঞ্জনপুর এলাকার আবু জাহের হাবুসহ একাধিক এলাকাবাসী জানান, মানব সেবা করতে গিয়ে এখন মানবেতর জীবন-যাপন করছেন ইয়াকুব ভাই। দরিদ্র মানুষগুলোর চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে নিঃস্ব প্রায় ইয়াকুব আলীর এই মহৎ উদ্যোগকে টিকে রাখতে তার পার্শে^ সরকারি-বেসরকারি ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানকে দাঁড়ানোর আহবান জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

 

ইয়াকুব আলী জানান, তার এমন কর্মে সংসারে ক্ষতি হচ্ছে বলে তার স্ত্রীর ভৎসর্না সইলেও ৩ বছর আগে স্ত্রী মারা গেলে এখন তার ২ ছেলেসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কয়েকজন তাকে সহায়তা দিচ্ছেন। ইয়ায়ুব আলী বলেন যতদিন বেঁচে থাকব এই কাজ করে যাব এই কাজ করতে পেরে খুব তৃপ্তি পান, দরিদ্ররা দোয়া করে এটাই আমার তৃপ্তি।

 

জয়পুরহাট টেলিভিশন রিপোটার্স ইউনিটির সভাপতি আব্দুল আলীম বলেন,বর্তমান সময়ে নিঃস্বার্থ ও নিবেদিত সমাজকর্মীর বড় অভাব। ইয়াকুব একজন নিবেদিত স্বার্থহীন সমাজকর্মী। নিজের অর্থ,সময় ও শ্রম দিয়ে অসহায় মানুষের মাঝে বিনামূল্যে যেভাবে প্রয়োজনীয় ঔষধ সেবা দিয়ে আসতেছে তা শুধু জয়পুরহাট নয় সারাদেশেই বিরল। সে বর্তমান সময়ে এক দৃষ্টান্তকারী পরোপকারী মানুষ।

 

ভাদসা ইউনিয়ন এর চেয়ারম্যান সরোয়ার হোসেন স্বাধীন জানান, অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্ভী না হলেও বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করে মানুষদের কাছে ঔষধ পৌঁছে দেয়। সমাজসেবার মধ্যে এটা একটা উল্লেখযোগ্য কাজ। আমাদের সমাজে অনেক ধনাঢ্য ব্যক্তি আছে কিন্ত প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের আমরা কয়জনইবা খোঁজ খবর রাখি। সেখানে তার মত একটা লোক এই ধরনের কাজ করে তা অবশ্যই একটা প্রশংসনীয় কাজ।

 

জয়পুরহাট পৌরসভা মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক বলেন,দরিদ্র ইয়াকুব আলীর এমন মহৎ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে সহায়তাদানকারি জনপ্রতিনিধিরা সমাজের বিত্তবান ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে এ কাজে অংশ গ্রহনের অনুরোধ জানান।

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায় সিসা হোস্ট