১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ ও দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো স্বীকৃতি প্রদান ও সংরক্ষণ করা হয় নি নীলফামারীর ডোমার বনবিভাগ সংলগ্ন বধ্যভূমি।
ডোমার উপজেলা পরিষদ (তৎকালীন সিও অফিস) কোয়ার্টার সংলগ্ন হলুদ ভবন ছিল পাক হানাদার বাহিনীর ক্যাম্প ও নির্যাতন সেল। যার ক্ষাণিক উত্তরে বনবিভাগের অভ্যন্তরে ছিল বিশাল বাংকার ও পাক সেনাদের যাতায়াত চৌকি। এই ক্যাম্পে রাজাকারদের পরামর্শে পাকবাহিনী স্বাধীনতাকামী মানুষদের উপর বর্বর নির্যাতন চালাত।
নির্মম নির্যাতনের পর বেয়নেট চার্জ করে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বারীকে হত্যা করে বনবিভাগের অভ্যন্তরে উঁচু ঢিবি সংলগ্ন বাংকারের পাশে মাটিচাপা দেয়। একই স্থানে দুর দুরান্ত থেকে নিয়ে আসা মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান, শহীদ মকবুল হোসেন সহ অজ্ঞাত পরিচয় বেশ কিছু মুক্তিযোদ্ধাকে নির্যাতন শেষে হত্যা করে।
এছাড়াও রাজাকারদের দেয়া তথ্যমতে বিভিন্ন অভিযোগে বোড়াগাড়ির আব্দুল আউয়াল তহশিলদার, আব্দুল গনি, শামসুদ্দিন, মুয়াজ্জিন, মনির উদ্দিন, জসিম, আলা, দুলাল, জামাল, ফুলু সহ দুর দুরান্ত থেকে কনভয়ে নিয়ে আসা হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রায় শতাধিক নারী-পুরুষকে শালকী নদী বিধৌত ডোমার বনবিভাগের অভ্যন্তরে নির্যাতন শেষে হত্যা করে পুতে রাখে। যাঁদের অধিকাংশের লাশ শেয়াল-শকুনে খেয়েছে। নির্মম বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞের সাক্ষী বনবিভাগের উঁচু ঢিবি ও বাংকারের অবশিষ্টাংশ আজও তার সাক্ষ্য বহন করছে। যা বধ্যভূমি হিসেবে আজও স্বীকৃতি পায় নি।
ডোমার উপজেলা শাখা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের আহ্বায়ক, শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, লেখক ও ইতিহাস গবেষক মো. আল-আমিন রহমান বলেন, আমার পিতা শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বারীকে নির্মম নির্যাতনের পর বেয়নেট চার্জ করে হত্যার পর বনবিভাগের উঁচু ঢিবি সংলগ্ন বাংকারের পাশে পুতে রাখে। সেখানে অসংখ্য স্বাধীনতাকামী নর-নারীকে পুতে রাখা হয়েছিল। আগামী প্রজন্মের কাছে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে প্রাণ দেওয়া অগণিত মানুষের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে স্থানটির সংরক্ষণ ও বধ্যভূমি হিসেবে স্বীকৃতির দাবী জানাই।
Leave a Reply